আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
নিজ গ্রামের পরিচিত সেলিম হোসেনের সাথে চুক্তি মোতাবেক গত বছরের ১০ ডিসেম্বর (১০/১২/২০২৪) মালোয়েশিয়ায় পাড়ি জমান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মহদিপুর গ্রামের নয়ন সরকার(৩৫)। কিন্ত সেই দেশে যাওয়ার পর কোন কাজ পাননি নয়ন সরকার। সেলিম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলেও তার পক্ষ থেকেও তেমন কোন সাড়া মেলেনি। প্রবাসী জীবনে কষ্টের কথা জানার পর স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে এখানে সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছেন নয়ন সরকারের স্ত্রী সাহারা বেগম(২৪) । সর্বশেষ সেলিম হোসেনের মহদিপুর (মুসার ঈদগাহ) বাড়িতে গিয়ে তার পিতা-মাতা ও স্ত্রীর কাছে স্বামীকে এনে দেওয়ার কথা বলতে গিয়ে উল্টো মারধরের স্বীকার হয়েছেন নয়ন নরকারের স্ত্রী সাহারা বেগম।
এ বিষয়ে গত মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি’২৫ সাহার বেগম বাদি হয়ে বাঘা থানায়, সেলিম হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ জেরিন (২৫),তেঁতুল মন্ডলের ছেলে আকবর হোসেন (৬৫),তার স্ত্রী মোসাঃ আখিরা(৫০),চারঘাটের রাওথা গ্রামের মোঃ মানিক (৪৫),তার স্ত্রী কাজলী (৩০)’র বিরুদ্ধে মারধর করে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের স্যামসাং ও ১ হাজার৫০ চাকা মূল্যের বাটন ফোন, ১লক্ষ টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন (ওজন ১২ আনা) ও কাছে থাকা ৭০০শ’ টাকা চুরি করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন । কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি।
সাহারা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন,তার মহদিপুর গ্রামের বাসিন্দা মালোযেশিয়া প্রবাসী সেলিম হোসেন ৬,৫০,০০০/- (ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার বিনিময়ে আমার স্বামী নয়ন সরকার(পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাং-মহদীপুর,)কে গত বছরের (১০/১২/২০২৪) ১২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় ভাল কাজের কথা বলে নিয়ে যায়। সেই দেশে নিয়ে গিয়ে দালালের নিকট আমার স্বামী নয়ন সরকারকে বিক্রয় করে দেয়। মালয়েশিয়ায় থেকে মোবাইল ফোনে আমার স্বামী বলেন , আমি এখানে খুব কষ্টে আছি। আমাকে কাজ দেয় নাই। আমাকে ৩ মাস ধরে একটি স্থানে আটকিয়ে রেখেছে। আমাকে বলে যে, দালালের নিকট থেকে পাসপোর্ট উঠানোর জন্য ১,২৫,০০০/ (এক লক্ষ পচিশ হাজার) টাকা দিতে হবে। সেই মোতাবেক আমি ১,২৫,০০০/- (এক লক্ষ পচিশ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় আমার স্বামীর পরিচিত এক লোক একটি ভাল কাজ দেয়। সেখানে কাজ করা থাকা অবস্থায় মালোয়েশিয়া প্রবাসী সেলিম হোসেন এবং সেলিমের ভাই মোঃ রাজিব আমার স্বামীর মালিকের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে এবং দেখা পেলে উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলেও মোবাইল ফোনে হুমকি প্রদান করে।
বিষয়টি জানার পর এ বছরর ২৫ ফেব্রুয়ারি( ২৫/০২/২০২৫) সকাল অনুমান ১০টার সময় মহদীপুর (মুসার ঈদগাহ) গ্রামের সেলিম হোসেনের দেশের বসত বাড়ীতে গিয়ে তার স্ত্রী মোসাঃ জেরিনকে বলি, তোমার স্বামী আমার স্বামীকে উঠিয়ে দিয়ে যাবে বলে হুমকি প্রদর্শন করেছে। তুমি আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। আমার মোবাইলে সকল প্রমান রয়েছে। এই কথা বলা মাত্রই মোসাঃ জেরিন এর হুকুমে মোসাঃ আখিরা (৫০) মোছাঃ কাজলী (৩০) আমার চুলের মুঠি ধরে টানা হেচরা করে মাথার অনেকগুলি চুল ছিড়ে ফেলে এবং আমার বুকে, তলপেটে এলোপাথারীভাবে লাথি মেরে ফোলা জখম করে। সকল বিবাদীগণ টেনে হেচরে তাদের বসত বাড়ীর গেটের সামনে নিয়ে আমার ব্যবহৃত ওড়ানা দিয়ে আকবর হোসেন এবং মোঃ মানিক আমার গলায়-পেচিয়ে আমার শ্বাস দোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় আমার হাতে থাকা স্যামসাং ও জিডিএল, বাটন মোবাইল ফোন, গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, নগদ ৭,০০০/-হাজার টাকা চুরি করে নেয়। ওই সময় বিবাদীগণ বিভিন্ন প্রকারের ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন বাঘা থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিবাদীগন পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা প্রথমে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্মরত ডাক্তার আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে ২৫/০২/২০২৫ ইং তারিখ হতে ২৭/০২/২০২৪ তাং পর্যন্ত ভর্তি ছিলাম।
এ বিষয়ে মালোয়েশিয়া প্রবাসী সেলিম হোসেনের মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করলে জানান,আমার স্ত্রীর ভাই হিসেবে মাধ্যম হয়ে মলোয়শিয়ার একটি কোম্পানীর এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে দিয়েছি মাত্র। কলিং ভিসাতে যাওয়ার জন্য সাড়ে ৩লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সেই টাকা লাগিয়ে দেওয়ার প্রমানও আছে। যাওয়ার আগে বিমান বন্দরে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। সেই টাকা তাদের যোগাড় ছিলনা। সেই ৬০ হাজার টাকা আমি দিয়েছি। সেখানে যাওয়ার পর কয়েকমাস কাজ করেছে। তবে দেড় মাস কোম্পানীর কাজ বন্ধ থাকায়, পরে অন্য একটি কোম্পানীতে কাজ করছে বলে শুনেছি। পরে সাড়ে ৬লাখ টাকা দেওয়ার দাবি করে আমার দেশের বাড়িতে গিয়ে গন্ডোগোল করেছে বলে শুনেছি। দালালের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।
বাঘা থানার এএসআই আব্দুল মালেক জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে গিয়েছিলাম। তারা মিমাংসা করে নিবে বলেছে। পরে আর কিছু জানাইনি।
প্রিন্ট