আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
রাজশাহীর বাঘায় এক মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের সহকারি শিক্ষক শরিফা খাতুনের নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র জাল করে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাকরির অভিজ্ঞতা দিয়ে এবার প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের পায়তারা করছেন।
জানা যায়, ৩০ বছর ধরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নওটিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরিরত শরিফা খাতুন। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে এইচএসসি পাশ সার্টিফিকিটে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে প্রথম এমপিওভ’ক্ত(ইনডেক্স নং-২৫৯৫৪৯) হয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন।
পরে বিএ পাশ করেছেন মর্মে বেতন স্কেল পরিবর্তনের আবেদন করেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিএ পাশ করেছেন মর্মে তার বেতন স্কেল ১২০০ টাকা থেকে ১৭২৫ টাকা স্কেলে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় দ্বিতীয় টাইম স্কেল প্রত্যাখান করা হয়।
পরে ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং এমপিওভ’ক্ত হন। সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদানের পর থেকে দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় এবং সনদ যাচাইয়ের দাবি তোলা হয়।
খোজ নিয়ে জানা যায়,২০২৩ সালে ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত- সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ১০ জন। এর মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত শরিফা খাতুন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন- এসএসসি প্রথম বিভাগ-১৯৯৬ খ্রিঃ,এইচএসসি দ্বিতীয় বিভাগ-১৯৯৩ খ্রিঃ,বিএ (পাশ ) ২য় বিভাগ ১৯৯৬ খ্রিঃ.বিএড-২য় শ্রেণি-২০০০ খ্রিঃ।
জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের সনদপত্র মোতাবেক ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাশ করেন শরিফা খাতুন। (শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৪-১৯৯৫ইং,রেজিঃ নম্বর-১৬৮৯২৪,রোল নম্বর-১০৭৪৮৭)। সাময়িক সনদপত্র মোতাবেক ২০০০ সালে বিএড পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। রোল নম্বর৪৮৩৪,রেজিঃ নম্বর-৬০৫০৩,শিক্ষা বর্ষ-১৯৯৯-২০০০ ইং।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান,সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির আগে সহকারি শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগের নিয়ম থাকলেও তা তিনি করেননি। এইচএসসি পাশে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলেও সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ আবেদনে তা তিনি উল্লেখ করেননি। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের শুন্যে পদে কোন বিজ্ঞপ্তি দেন নাই।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালিন প্রধান শিক্ষক মোছাঃ হাছনা বানু অবসরে যাওয়ার পর থেকে তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে শরিফা খাতুন জানান, চলতি (মে) মাসের ১ তারিখে পদত্যাগ করেছেন। তার সনদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনেছি। প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার আগে সহকারি প্রধান শিক্ষক সহ ৫টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি,বিশেষজ্ঞ হিসেবে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ডিজির প্রতিনিধি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তারা সব কিছু যাচাই-বাছাই করে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
তার ভাষ্য,সেই সময়ের সভাপতি আমজাদ হোসেন নবাবও নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। পরে তিনি আবারো সভাপতি হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন। নিয়ম মেনে যে এডহক কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহি অফিসার। তার সনদ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়,বিদ্বেসমূলক।
সেই সময়ের সভাপতি আমজাদ হোসেন নবাবের ভাষ্য, পদে থেকে অন্য কোন পদে আবেদন করতে হলে সেই পদ থেকে রিজাইন দিতে হয়। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকের কাছে সহকারি শিক্ষক পদ থেকে রিজাইন দেননি। ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি শেষ কর্মদিবস শেষ করে অবসের যান প্রধান শিক্ষক মোছাঃ হাছনা বানু। আমার সভাপতি হওয়ার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যে কথা বলেছেন তা সঠিক নয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আফম হাসান জানান, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় কোন অনিয়ম হয়নি। তবে লিখিত কোন অভিযাগ পেলে বিষয়টি খতিযে দেখবো।
প্রিন্ট