রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা হাসান আলী বিশ্বাস (৭১) ও তার স্ত্রী ধামচন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এইচ.বি রওশন আরা বেগম (৬৪) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্যজনিত কারণে পাংশা পৌরসভার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাড়ীতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
হাসান আলী বিশ্বাস চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর স্ট্রোক করার পর বামহাত ও বাম পা প্যারালাইজড হয় এবং তার স্ত্রী এইচ.বি রওশন আরা বেগম গত সেপ্টেম্বর মাসে থম্বোসিস রোগে আক্রান্ত হন। তার ডান পা অপারেশন করা হয়। দু’জনই শারীরিক ভাবে অচল। হাসান বিশ্বাস অন্যের সহযোগিতা ছাড়া ওঠাবসা ও চলাফেরা করতে পারেন না।
তার স্ত্রী এইচ.বি রওশন আরা বেগম ঘরের মধ্যে ধীরে চলাচল করতে পারেন। ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে পারেন না। উভয়েরই ডায়াবেটিস আছে।
হাসান আলী বিশ্বাস অসুস্থ্যতার শুরু থেকে ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল এবং পরবর্তিতে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।
এছাড়া এইচ.বি রওশন আরা বেগম ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র মোতাবেক চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। তারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত ঔষধ সেবন করছেন। হাসিখুশি মনে একজন সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত থেকে আরেকজন শিক্ষকতা পেশা শেষে সাংসারিক কাজে সময় দিয়ে জীবন কাটানো সৃজনশীল ও আলোকিত দুজন মানুষের আজ যেন ঘরবন্দি সময় কাটাতে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ৩ডিসেম্বর দুপুরে বিষ্ণুপুর গ্রামের বাড়িতে দেখা করতে গেলে আলপচারিতায় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আলী বিশ্বাস আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, সারাজীবন মানুষের মাঝে থেকেছি, দলের জন্য কাজ করেছি। অসুস্থ্য হওয়ার পর অনেকেই দেখা-সাক্ষাৎ করে চিকিৎসা ও সাংসারিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। মন চাইলেও ঘরের বাইরে যেতে পারছি না।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা হাসান আলী বিশ্বাস বলেন, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাংশার সভাপতি ছিলাম। সভাপতি হিসেবে ৭১’র ২৩ মার্চ পাংশা শহরের হামিদ আলী হল মাঠে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের আয়োজন করি এবং পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই সংগঠনের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, গওহার উদ্দিন মন্ডল পাংশা থানা আওয়ামী সভাপতি, হাজী রহমত আলী বিশ্বাস তৎকালীন পাংশা ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘকাল। ১৯৭৪ সালে গওহার উদ্দিন মন্ডল সভাপতি, খান আব্দুল হাই সাধারণ সম্পাদক এবং হাসান আলী বিশ্বাস ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮৪ সালে হাসান আলী বিশ্বাস থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৬ সালের কাউন্সিল থেকে টানা ৩৬ বছর তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে কাউন্সিলে বারবারই তিনি সভাপতি হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন। কিন্তু তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই রাখা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হাসান আলী বিশ্বাস আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন- আজ আমার জীবনে, আমার পরিবারের দুর্দিন চলছে। মানুষের মাঝে যেতে চাই, দলীয় কার্যালয়ে যেতে চাই, কিন্তু পারি না। সে সুযোগও নেই। ঘরে বসে মোবাইল ফোনে যতটুকু পারি সবার খোঁজ খবর নেই। শুভাকাংখীরা অনেকেই মোবাইল ফোনে আবার কেউ কেউ বাড়ীতে এসে দেখা করে খোঁজ খবর নেয়, এতেই সান্তনা পাই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। নিজের এবং স্ত্রীর রোগমুক্তির জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা হাসান আলী বিশ্বাস।
প্রিন্ট