মোঃ রনি আহমেদ রাজু, বিশেষ প্রতিনিধি:
মাগুরাতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচারকার্য ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার জন্য হাইকোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মাগুরার সাধারণ ছাত্র জনতা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতের ফাঁসির দাবি নিয়ে রোববার সকাল থেকে মাগুরাতে বিক্ষোভ শুরু করে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। সকাল ১০টায় মাগুরাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ চত্বরে। পরে তারা ফাঁসির দাবি জানিয়ে মিছিল নিয়ে অবস্থান নেয় মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে।
দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের মধ্যে থেকে ১০ জন প্রতিনিধি মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মতিনের খাস কামরায় গিয়ে সাক্ষাত করেন। এ সময় মাগুরা ক্যাম্পের দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মেজর সাফিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আইয়ুব আলীসহ দায়িত্বশীল অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর বলেন, হাইকোর্ট মাগুরা শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি ছাত্র প্রতিনিধিদের জানানো হলে তারা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে এলেও তারা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
মাগুরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বেরিয়ে এলেও মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত সেনা অফিসার মেজর সাফিন বিচার কার্যের ধারাবাহিকতার বিষয়টি তুলে ধরে বিক্ষোভকারীদের কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ জানালে বিক্ষোভকারীরা সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ অবস্থায় দুপুর ২টার দিকে তারা আদালতের সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শহরের ভায়না মোড়ে গিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা মাইকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করে বক্তব্য দেন।
এ সময় সেখানে মাগুরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক রাকিবুল ইসলাম, রাতুল, জেলা যুব অধিকারের সভাপতি মো: উবায়দুল্লাহ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মার্শাল জিহাদসহ ছাত্রশিবিরের কর্মীদের অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিকাল ৪টার মধ্যে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশনার দাবি জানিয়ে তারা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মাগুরা শহরের ভায়নার মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিলে খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা হাজারও যানবাহন সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বিকাল ৪টার কয়েক মিনিট আগে মাগুরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল কাদের হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়টি তাদের মনে করিয়ে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেও তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।
এ অবস্থায় মাগুরা জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালে উভয়পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধে আটকে পড়া যানবাহন বিকাল ৫টার দিকে ব্যারিকেড এড়িয়ে চলাচল শুরু করে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ হুসাইন বলেন, আমরা দুপুর ২টা পর্যন্ত আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেছি। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনার কথা জানতে পেরে কর্মসূচি শেষ করলেও উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তাদের এ কর্মকাণ্ড অযৌক্তিক বলে মনে করছি।
উল্লেখ্য, ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ৮ বছরের একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা শনিবার মাগুরা থানায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, বোনজামাই সজিব, সজিবের বড় ভাই রাতুল এবং বোনের শাশুড়ি জাহেদাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যেই পুলিশ অভিযুক্ত ৪ আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে
প্রিন্ট