ঢাকা , শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে স্বস্তি Logo রায়পুরায় আ.লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষ, নিহত ২ Logo সদরপুরে অভিযান চালিয়ে ৯শ মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার Logo কুষ্টিয়া সরকারি নজরদারির না থাকায়’বেড়েছে তামাক চাষ Logo তানোরে পুকুর ভরাট জনমনে ক্ষোভ ! Logo বরিশাল বিভাগ ফোরামের আয়োজনে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল Logo অসুস্থ কন্যার চিকিৎসার জন্য সর্বস্তরের জনগণের কাছে সাহায্যের আবেদন করছেন পিতা Logo সাংবাদিক মিজানুর রহমান নয়নের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন Logo রাজশাহীর কেশরহাটে পৌর বিএনপির উদ্যোগে ইফতার মাহফিল Logo জেনারেল এগ্রোভিট কোম্পানীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করার প্রতিবাদে প্রকৃত মালিকের সাংবাদিক সম্মেলন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

হাট-বাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসিল্যান্ডের সেলামী আড়াই লাখ টাকা!

বাদশাহ মিয়াঃ

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার জলিরপাড় এলাকার ভূক্তভোগীরা।

 

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পাউবোর ওই জমি পুনঃগ্রহণ (রিজুম) করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক। ২০১৭ সালে পেরীফেরীভূক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে লীজ কেসের মাধ্যমে ২৯ ব্যবসায়ীকে ওই সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয়া হয়।

 

 

এরআগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়। সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরীফেরীভূক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে ভেঙে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় পূর্বের ভোগদখলীয় ব্যবসায়ী ডিসিআরের নবায়নের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করেন। এছাড়াও নতুন করে আরও একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। এ সুযোগে সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের সহযোগিতায় নদী থেকে (বিলরুট ক্যানেল) বালু উত্তোলন করে ওই জমি ভরাট করছেন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গোপনে ডিসিআর দিয়েছেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, গত ১ মার্চ সহকারী কমিশনার মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তাফা সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি অফিসে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় তিনি হাট-বাজারের ভিটি বন্দোবস্ত নিতে তাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সেলামী দিতে হবে বলে ‘নির্ধারণ’ করে দিয়েছেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত সেলামী বছরে মাত্র ২৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। পরে ওই ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

 

 

জলিলপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ একাধিক ভূক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় আমাদের ঘর ভেঙে ফেলতে হয়েছে। পুনরায় ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসিল্যান্ড স্যার করে দেয়নি। সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে এসিল্যান্ড স্যার জলিরপাড় ভূমি অফিসে আমাদের ডেকে নিয়ে নতুন করে ডিসিআর নিতে বলেন। আর এ জন্য ৩ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগবে বলেও জানান তিনি। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো। আমাদের ডিসিআর পুর্নবহাল করতে ডিসি স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

 

 

অপর এক ভূক্তভোগী চুন্নু চোকদার বলেন, ‘আমি গরীর মানুষ। রাস্তার পাশে সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে একটি ছাপড়া তুলেছি। এখন নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এ জন্য এসিল্যান্ড অফিসে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে আমার ছাপড়া ভেঙে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছেন সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাস। আমি এতো টাকা কোথায় পাবো।’

 

 

জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা চাইনি। আর ডিসিআর দেওয়ার আমি কেউ না। আমরা শুধু এখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’

 

 

মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভিটি প্রতি আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ডিসিআরের চুক্তি এক বছরের। পরবর্তীতে আমি তাদের নাও দিতে পারি। কোথাও লেখা নেই যে, পুনরায় তাদের সাথে আমার চুক্তি করতে হবে। আমি তাদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য নই। অনেকে দোকানের অস্তিত্ব নেই। যে কারণে যাচাই-বাছাই নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ওখানে বালু ভরাট করা হচ্ছে, একটা বড় ধরণের খরচের বিষয়ও রয়েছে।’

 

 

এরই মধ্যে দুটি ডিসিআর নবায়ন করা হয়েছে। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভুল বুঝিয়ে দুটি ডিসিআর নবায়ন করা হয়েছে। যা বাতিলও করা হয়েছে।’

 

এ বিষয় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে স্বস্তি

error: Content is protected !!

হাট-বাজারের ভূমি বন্দোবস্ত পেতে এসিল্যান্ডের সেলামী আড়াই লাখ টাকা!

আপডেট টাইম : ০৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
বাদশাহ মিয়া, মুক্সুদপুর (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি :

বাদশাহ মিয়াঃ

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ও জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার জলিরপাড় এলাকার ভূক্তভোগীরা।

 

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাউবোর জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পাউবোর ওই জমি পুনঃগ্রহণ (রিজুম) করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসক। ২০১৭ সালে পেরীফেরীভূক্ত হয়ে নকশা বের হয়। ২০২৪ সালে লীজ কেসের মাধ্যমে ২৯ ব্যবসায়ীকে ওই সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয়া হয়।

 

 

এরআগে ২০২০ সালে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়। সরকারি নির্দেশে সড়কের পাশের পেরীফেরীভূক্ত জমি থেকে দোকানপাট নিজ দায়িত্বে ভেঙে সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ওই জমি সড়ক বিভাগের কাজে না লাগায় পূর্বের ভোগদখলীয় ব্যবসায়ী ডিসিআরের নবায়নের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করেন। এছাড়াও নতুন করে আরও একাধিক ব্যক্তি ওই ভূমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। এ সুযোগে সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাসের সহযোগিতায় নদী থেকে (বিলরুট ক্যানেল) বালু উত্তোলন করে ওই জমি ভরাট করছেন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গোপনে ডিসিআর দিয়েছেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, গত ১ মার্চ সহকারী কমিশনার মোহাম্মাদ গোলাম মোস্তাফা সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জলিরপাড় ভূমি অফিসে ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন। সভায় তিনি হাট-বাজারের ভিটি বন্দোবস্ত নিতে তাকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সেলামী দিতে হবে বলে ‘নির্ধারণ’ করে দিয়েছেন। যেখানে সরকার নির্ধারিত সেলামী বছরে মাত্র ২৬০ টাকা। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। পরে ওই ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

 

 

জলিলপাড় বাজারের শহীদুল, তৌহিদ শেখ, লিপি বেগমসহ একাধিক ভূক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ডিসিআর নিয়ে ওই জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করে খাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় আমাদের ঘর ভেঙে ফেলতে হয়েছে। পুনরায় ডিসিআর নবায়ন করতে গেলে এসিল্যান্ড স্যার করে দেয়নি। সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাসের মাধ্যমে এসিল্যান্ড স্যার জলিরপাড় ভূমি অফিসে আমাদের ডেকে নিয়ে নতুন করে ডিসিআর নিতে বলেন। আর এ জন্য ৩ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগবে বলেও জানান তিনি। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো। আমাদের ডিসিআর পুর্নবহাল করতে ডিসি স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

 

 

অপর এক ভূক্তভোগী চুন্নু চোকদার বলেন, ‘আমি গরীর মানুষ। রাস্তার পাশে সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে একটি ছাপড়া তুলেছি। এখন নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হবে। এ জন্য এসিল্যান্ড অফিসে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে আমার ছাপড়া ভেঙে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছেন সহকারী তহশীলদার রিমন বিশ্বাস। আমি এতো টাকা কোথায় পাবো।’

 

 

জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা রিমন বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা চাইনি। আর ডিসিআর দেওয়ার আমি কেউ না। আমরা শুধু এখান থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’

 

 

মুকসুদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভিটি প্রতি আড়াই লাখ টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ডিসিআরের চুক্তি এক বছরের। পরবর্তীতে আমি তাদের নাও দিতে পারি। কোথাও লেখা নেই যে, পুনরায় তাদের সাথে আমার চুক্তি করতে হবে। আমি তাদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য নই। অনেকে দোকানের অস্তিত্ব নেই। যে কারণে যাচাই-বাছাই নতুন করে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ওখানে বালু ভরাট করা হচ্ছে, একটা বড় ধরণের খরচের বিষয়ও রয়েছে।’

 

 

এরই মধ্যে দুটি ডিসিআর নবায়ন করা হয়েছে। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভুল বুঝিয়ে দুটি ডিসিআর নবায়ন করা হয়েছে। যা বাতিলও করা হয়েছে।’

 

এ বিষয় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


প্রিন্ট