ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের মাঝে সরকারিভাবে বীনামূল্যে সাড়ে ৩শ’ আধাপকা ঘর প্রদান করা হয়েছে। সবক’টি ঘরই এখন পর্যন্ত ভালো আছে বলে জানিয়েছেন সুবিধাভোগী সহ সংশ্লিষ্টরা।
রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মোঃ মাসুম রেজা, উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মোতালেব হোসেন মোল্যা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদা বেগম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল হক টিটু সহ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা মিলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে গৃহহীনদের দেওয়া ঘরগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং ঘরগুলোর কোনো ত্রুটি খুজেঁ পান নাই। এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আসলাম মোল্যাও ঘরগুলো পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
কিন্ত সম্প্রতী, একটি মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশের অন্য কোনো উপজেলার ভাঙা বিধ্বস্ত ঘরের ছবি পোষ্ট করে অত্র উপজেলার ঘরগুলো অত্যান্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং সরকারি ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের দেওয়া সাড়ে ৩শ’ ঘরের মধ্যে উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের আশ্রয়ন কেন্দ্রে রয়েছে ৪১টি ঘর, গাজীরটেক ইউনিয়নের চরঅযোধ্যা ছিটা ডাঙ্গী গ্রামের আশ্রয়ন কেন্দ্রে ২৭টি এবং উক্ত ইউনিয়নের চরঅযোধ্যা গ্রামের আশ্রয়ন কেন্দ্রে রয়েছে আরও ২০টি ঘর।
এছাড়া খাস জমির সংকটে গৃহহীনরা তাদের জমি সরকারকে দেওয়ার পর তা খাস খতিয়ানে নিয়ে বাকী ২৬২টি ঘর নির্মান করে সুবিধাভোগীদের ঘর সহ জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতী একটি মহল ফেসবুকে কিছু ভাঙা বিধ্বস্ত ঘরের ছবি পোষ্ট করে উপজেলায় অত্যান্ত নিম্নমানের গৃহ নির্মান হয়েছে বলে অপপ্রচার চালায়।
এরপর তারা ফেসবুকে একের পর এক কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য লেখা প্রকাশ করেছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ সুবিধাভোগীদের টনক নড়ে। ফলে মুজিব বর্ষের উপহারের ঘরগুলো ঘিরে উপজেলা জুড়ে তদন্ত শুরু করেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ফেসবুকে যেসব ঘরের ছবি পোষ্ট করা হয়েছে সেগুলোর চালা রয়েছে নীল রংয়ের টিনের চিত্র। আর উপজেলায় সরকারিভাবে যেসব ঘর প্রদান করা হয়েছে সবগুলো লাল টিনের চালা। ফেসবুকে বিধ্বস্ত ঘরটির চিত্র উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চরসুলতানপুর দোপা ডাঙ্গী গ্রামের মৃত মুকদুম মৃধার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ঘরের কথা উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু ওই বসতবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভালো আছে এবং ঘরের কোথাও কোনো ত্রুটি নেই।
এ ব্যপারে সুবিধাভোগী অসুস্থ্য মনোয়ারা বেগম (৬৬) জানায়, “ আমার ঘরের কোথাও কোনো ত্রুটি নেই বা ভাঙে নাই। কে বা কারা আমার ক্ষতি করার জন্য মিথ্যা রটনা ছড়াচ্ছে তা আমি জানি না”।
উক্ত বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে নুরু মৃধা বলেন, “ ভবিষ্যতে আমরা যাতে সরকারি সুবিধা না পাই, সেজন্য একটি মহল আমাদের নামে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে”। এছাড়া পার্শ্ববতী চরঅযোধ্যা ছিটা ডাঙ্গী গ্রামের আশ্রয়ন কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, “উক্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ২৭টি ঘর নির্মান করে গৃহহীনদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। একটি ঘরও ভাঙে নাই। সবগুলো ঘরই ভালো আছে এবং প্রত্যেক বসতি সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
উক্ত আশ্রয় কেন্দ্রের বসতি আসমা আক্তার (৫০) জানায়, “পদ্মায় বসতবাড়ী বিলীন হওয়ার পর পার্শ্ববতী চরঅমরাপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের ঢালে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় পরবাস হইয়া আমারে সুন্দর একটি আধাপাকা ঘর দিয়েছেন। আমার জীবনের স্বপ্ন পূরন হইছে বইল্যে আমি খুব খুশি আছি”।
ঘরগুলোর ব্যপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পচিালক মোঃ আসলাম মোল্যা জানান, “ঘরগুলো নির্মানকালে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সহ আমরা দফায় দফায় পরিদর্শন অত্যন্ত সুচারুভাবে মুজিববর্ষের ঘরগুলো গড়া হয়েছে এবং আমাদের মনিটর টিমও রয়েছে। আমরা ঘরে কোনো ত্রুটি খুঁজে পাই নাই”।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মোঃ মাসুম রেজা জানান, “ গত ক’দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র সহ পদ্মার চারঞ্চলে গড়া গৃহহীনদের ঘরগুলো পরিদর্শন করে সবগুলো ঘরই ভালো পেয়েছি কোনো ত্রুটি পাই নাই”।
আর উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মোতালেব হোসেন মোল্যা বলেন, “ একটি কুচক্রীমহল জেলা প্রশাসন সহ উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তী বিনষ্ট করার জন্য ফেসবুকে মিথ্যে গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান”।
প্রিন্ট