মানিক কুমার দাসঃ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারী দিবস কমিটি ফরিদপুরের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১১:৩০ টায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক এডভোকেট শামসুদ্দিন মোল্লা মিলনায়তনে প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আশরাফুজ্জামান দুলালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়ালের সঞ্চালনায় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিনি নারী কল্যাণের সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা বেগম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হিরুননাহার বেগম, ওমেন ওরিয়েন্টেশন এন্ড রুরাল লাইফ ডেভেলপমেন্টের সদস্য অ্যাডভোকেট রুহি শামসাদ আরা, শাপলা মহিলা সংস্থার সদস্য নার্গিস বানু, অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার, আসমা আক্তার মুক্তা। এ সময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন “জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা কার্যকর অংশগ্রহণ করতে পারে না। নারীদের মতামত প্রদান বা ভূমিকা রাখার তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। নারীর মুক্তি, ক্ষমতায়ন ও অধিকার কাগজে, স্লোগানে ও বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। ঘরে, বাইরে ও কর্মস্থল সহ সর্বক্ষেত্রে নারীকে সুরক্ষা দিতে হবে। বাল্যবিবাহ এবং ধর্ষণের ঘটনাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি এর উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি পর্যায়ে সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন মতামত প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
নারীর সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত নিশ্চিতে ১১ টি দাবি সমূহ হচ্ছেঃ
১. নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
৪. নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও গণসহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে।
৬. আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৯. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে কঠোর সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১১. জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
প্রিন্ট