ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ফরিদপুরে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত Logo লালপুরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে কবিরাজের লাশ উদ্ধার Logo পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণাকারী গ্রেফতার Logo শালিখার আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা Logo ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ Logo ফরিদপুরের ধর্ষণ মামলার আসামী সোহেল গ্রেপ্তার Logo পাংশায় শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের সাধারণ সভায় নতুন কমিটি Logo কুষ্টিয়ায় উলামা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত Logo নির্বাচন ছাড়া কোন সরকার দীর্ঘদিন থাকলে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারেরা জন্ম নেয়ঃ -আব্দুস সালাম Logo ভেড়ামারায় মাজারে মাদকবিরোধী অভিযান, ভক্তদের হাতে লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

রাজশাহীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের মানবেতর জীবনযাপন

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা টানা ৮ মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তর নিয়ে জটিলতায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এমনকি দ্রুত বেতন ভাতা না পেলে এই পেশা ছেড়ে জীবন জীবিকার তাগিদে অনেককে বেছে নিতে হতে পারে অন্য পেশা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ৩২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়। সে বছর প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ৭৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী ২০০১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প) এর আওতায় ২০০৯ সালে শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে লোকবল দেওয়া হয়। ৫ বছর অতিবাহিত হলে ২০১৫ সালে ওপিতে যায়। ওপি থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

 

এদিকে রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় মোট ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৪টি, চারঘাট উপজেলায় ২৩টি, বাঘা উপজেলায় ২০টি, পবা উপজেলায় ৩২টি, তানোর উপজেলায় ১৯টি, মোহনপুর উপজেলায় ১৯টি, দুর্গাপুর উপজেলায় ১৯টি, পঠিয়া উপজেলায় ২৮টি, বাগমারা উপজেলায় ২০টি। তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) হরিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সজিব বলেন, “আমরা প্রতিদিন শত শত রোগীকে সেবা দিচ্ছি। আগে বরাদ্দ আসলে দুই এক মাস পর বা প্রতি মাসেই বেতন পেতাম। গত ৮ মাস থেকে হরিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কোন বেতন পাইনি।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৮ মাস থেকে বেতন না পেলে সংসার নিয়ে কেমন থাকতে পারি বলেই এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে দেন।”

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিএইচসিপি বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই বাজারে সামান্য ওই বেতন দিয়ে টেনেটুনে কোনো রকমে সংসার চলতো। তারপর আবার গত ৮ মাস থেকে বেতন পাইনি। দোকানে বাকীর টাকা বেশী হওয়ায় দোকানদাররা আর বাকিতে জিনিস দিচ্ছে না। কী যে বিপদে রয়েছি, কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। সংসারে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিনযাপন করছি। তার পরও রমজান মাস। কোন হাট বাজার করতে পারিনি। কি যে হয় আল্লাহ ভাল জানেন।”

 

তানোর উপজেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “টানা গত ৮ মাসেও বেতন হয়নি। এ কারণে জেলার ২৩২ জন হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অনেকেই ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ, পরিবারের অসুস্থ স্বজনদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছেন না। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।”

 

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম অন্তর বলেন, “ট্রাস্ট ও রাজস্ব খাতের জটিলতার কারণে ৮ মাস ধরে বেতন ভাতা পাইনি। হাইকোর্টে রিট করে ট্রাস্ট থেকে রাজস্ব খাতে যাওয়ার পক্ষে রায় হয়। আপিল করলে আপিলে ট্রাস্টের পক্ষে রায় হয়। গত ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ট্রাস্ট যোগ হয়। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। বেতন ভাতা না পাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা হতাশ।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

রাজশাহীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের মানবেতর জীবনযাপন

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা টানা ৮ মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তর নিয়ে জটিলতায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এমনকি দ্রুত বেতন ভাতা না পেলে এই পেশা ছেড়ে জীবন জীবিকার তাগিদে অনেককে বেছে নিতে হতে পারে অন্য পেশা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ৩২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়। সে বছর প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০ হাজার ৭৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী ২০০১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প) এর আওতায় ২০০৯ সালে শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে লোকবল দেওয়া হয়। ৫ বছর অতিবাহিত হলে ২০১৫ সালে ওপিতে যায়। ওপি থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

 

এদিকে রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় মোট ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৪টি, চারঘাট উপজেলায় ২৩টি, বাঘা উপজেলায় ২০টি, পবা উপজেলায় ৩২টি, তানোর উপজেলায় ১৯টি, মোহনপুর উপজেলায় ১৯টি, দুর্গাপুর উপজেলায় ১৯টি, পঠিয়া উপজেলায় ২৮টি, বাগমারা উপজেলায় ২০টি। তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) হরিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সজিব বলেন, “আমরা প্রতিদিন শত শত রোগীকে সেবা দিচ্ছি। আগে বরাদ্দ আসলে দুই এক মাস পর বা প্রতি মাসেই বেতন পেতাম। গত ৮ মাস থেকে হরিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কোন বেতন পাইনি।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৮ মাস থেকে বেতন না পেলে সংসার নিয়ে কেমন থাকতে পারি বলেই এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন ছুড়ে দেন।”

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিএইচসিপি বলেন, “দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই বাজারে সামান্য ওই বেতন দিয়ে টেনেটুনে কোনো রকমে সংসার চলতো। তারপর আবার গত ৮ মাস থেকে বেতন পাইনি। দোকানে বাকীর টাকা বেশী হওয়ায় দোকানদাররা আর বাকিতে জিনিস দিচ্ছে না। কী যে বিপদে রয়েছি, কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। সংসারে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিনযাপন করছি। তার পরও রমজান মাস। কোন হাট বাজার করতে পারিনি। কি যে হয় আল্লাহ ভাল জানেন।”

 

তানোর উপজেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “টানা গত ৮ মাসেও বেতন হয়নি। এ কারণে জেলার ২৩২ জন হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অনেকেই ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ, পরিবারের অসুস্থ স্বজনদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছেন না। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।”

 

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম অন্তর বলেন, “ট্রাস্ট ও রাজস্ব খাতের জটিলতার কারণে ৮ মাস ধরে বেতন ভাতা পাইনি। হাইকোর্টে রিট করে ট্রাস্ট থেকে রাজস্ব খাতে যাওয়ার পক্ষে রায় হয়। আপিল করলে আপিলে ট্রাস্টের পক্ষে রায় হয়। গত ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ট্রাস্ট যোগ হয়। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। বেতন ভাতা না পাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা হতাশ।”


প্রিন্ট