মহম্মদপুরে অনাহারে-অর্ধাহারে জীর্ণ কুটিরে একাকী বাস করেন লক্ষ্মী রানী। বর্ষাকালে কষ্টের সীমা থাকে না তার। ঘরের মধ্যে বৃষ্টির পানি পড়ায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। স্বামী-সংসার ও মা-বাবা হারানো ৫০ বছরের বেশি বয়সী লক্ষ্মী রানী জীর্ণ এই বাড়িতে বসবাস করছেন দুই যুগের অধিক সময় ধরে।
জন্ম থেকে দুটি পা পঙ্গু। কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু পঙ্গুত্বের অভিশাপে সংসার করার সৌভাগ্য হয়নি। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে লক্ষ্মী রানীর স্বামী চলে যান লক্ষ্মী রানীকে ছেড়ে।
পোড়া কপালে সুখের দেখা কখনও মেলেনি। ঘরের বাতিটাও জ্বলে না। রাতে ঘুমানোর জন্য রয়েছে একটি ছিঁড়ে যাওয়া খেজুর পাতার পাটি। তাই নতুন করে পাতা সংগ্রহ করে আরেকটি পাটি বানাতে চেষ্টা করছেন।
এই গল্প মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের রুই-ফলোশিয়া গ্রামের অসহায় লক্ষ্মী রানীর।
লক্ষ্মী রানীর কাছে একটু এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘শুনেছি সরকার সবাইরে ঘর বানায়ে দেছে। আমি এই ঘরটাই শুতি পারিনে। আপনারা সরকাররে কয়ে আমারে এটটা ঘর বানায়ে দেন।’
লক্ষ্মী রানী চিকিৎসা ও অন্নবস্ত্রের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বললেন, ‘কোনো দিন খাবার জোটে, কোনো দিন জোটেই না, মাঝে মাঝে উপোসও থাকতি অয়। আমার খোঁজ কেউ নেয় না।’
সরেজমিনে রোববার সকালে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঘরের মধ্যেই রান্নার চুলা। বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে মাটির ডোয়া। একটু ঝোড়ো বাতাসেই দোল খায় বসতঘর। প্রতিবেশীরা চালডাল দিলে মাঝেমধ্যে নিজেই রান্না করেন, অন্যথায় না খেয়ে দিনাতিপাত করেন।
সাত বোনের মধ্যে লক্ষ্মী ছিল বড়। অন্য ছয় বোনের বিয়ের পর সবাই ভারতে চলে যায়। এর কিছুদিন পর মারা যায় বাবা মুকুন্দ সরকার ও মা বিকোশা রানী সরকার। তারপর থেকে অসহায় জীবন-যাপন শুরু তার। তার দুঃখ-দুর্দশা দেখে প্রতিবেশী লক্ষ্মণ কুমার বিশ্বাস নামের এক লোক দেখাশোনা করেন।
বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মীর সাজ্জাদ আলী বলেন, এটা তার দেখার বিষয় নয়। তবে তার কাছে আবেদন করলে একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।
ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, লক্ষ্মী রানীর বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন। খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রিন্ট