মোঃ আলম মৃধাঃ
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় কাদির মোল্লার আদুরী গার্মেন্টসের গেটে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর ও গুলি করে অস্ত্রের মহড়া দেয় সন্ত্রাসীরা। গত (২৭ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গার্মেন্টসের সিকিউরিটি পক্ষ থেকে জানানো হয়, একদল দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থলে এসে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। একাধিক রাউন্ড গুলিও করে। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র রামদা নিয়ে প্রায় ২০০-২৫০ শত সন্ত্রাসী নিয়ে মহড়া দেয় তারা। এ সময় খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়, আদুরী মিলগেট এলাকার আলতাবের ছেলে মোস্তফা, সুলতান মোল্লার ছেলে বাদল মোল্লা এবং সোলেমানের ছেলে টিটু গং এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এই সব ঘটনায় আগেও একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন অভিযোগ, অস্ত্র ও হত্যার মামলাও রয়েছে।
এ বিষয়ে বাদল মোল্লা বলেন, আমি যদি ঘটনাস্থলে থাকি ওইখানে সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। আপনারা সংগ্রহ করেন। পুলিশ প্রশাসন ও আপনারা এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন। আমার আদুরী ঝুট ব্যবসার সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক নাই।
এ বিষয়ে খোকা মোল্লা বলেন, মঙ্গলবারে আমি ঢাকা থেকে চোখ অপারেশন করে বাড়িতে এসেছি। বুধবারে আমার কাটন ডেলিভারির জন্য গজারিয়া গোডাউনে লোকজন কাজ করছিল। আমি বাড়িতে ছিলাম। সাড়ে বারোটার দিকে আদুরী গার্মেন্টসের গেটে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে আমি শুনতে পাই। বাদল মোল্লা এখানে লোকজন নিয়ে কি কারনে এসেছে আমার জানা নেই। বাদল মোল্লার তো এখানে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। আমার লোকজন যেই জায়গা থেকে মাল নিতে ছিল ওই জায়গার আশে-পাশেও তারা যায়নি। আমার জানামতে তাদের সাথে আমার কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে জানালা নাই। আপনারা ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে সত্য ঘটনা। ফ্যাক্টরি হওয়ার শুরু থেকেই মোল্লা সাব দয়া করে আমাকে একটু ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। তখন থেকেই আমি এই ফ্যাক্টরিতে সুনামের শহীদ ব্যবসা করে আসছি। এই ফ্যাক্টরিগুলো এখানে হওয়াতে আমাদের এলাকার লোকজন কাজ করে খেতে পারছে। আমি সৎভাবে ব্যবসা করতেছি বলে মোল্লা সাহেব আমাকে এখনো রেখেছে।
এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসাইন দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, আমরা খবর পাই কাদির মোল্লার আদুরী গার্মেন্টসে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষে নেমেছে। তাৎক্ষণিক ওই জায়গায় পুলিশের টিম পাঠাই। আমি নিজেও ঘটনস্থলে যাই। আমরা পৌঁছানোর পূর্বেই ঘটনাস্থলে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ঐখানকার সিকিউরিটি ইনচার্জ এবং এডমিন হাবিব সাহেব ছিলেন উনাদেরকে সাথে নিয়েই আমরা পরিদর্শন করি। ঘটনাস্থলে লাল কালো কষ্টেপ পেঁচানো ধংশব্য একটি খোসা পাই। এখন পর্যন্ত আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি অভিযোগ করে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব। অভিযোগ না করলেও যেহেতু আমার থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতেছে তাদেরকে “ডেভিল হ্যান্টের” আওতায় আনার চেষ্টা করবো।
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, কে বা কাহারা ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছি। তারা বলেছে মালিক পক্ষের অনুমতি ছাড়া দিতে পারবে না। তারা কথা বলে আমাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দিবে। এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আসলে বিস্তারিত জানতে পারবো। প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা আমাদের জন্য সহজ হবে।
এ বিষয়ে জানতে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশার প্রতিনিধি, কাদির মোল্লার আদুরী গার্মেন্টসে গিয়ে উনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ঝুট ব্যবসা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল, যা এবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। একটি গোষ্ঠীর চাহিদামতো টাকা না দিলে তারা গোলাগুলি ও হামলা চালায়। বর্তমানে পুরো এলাকা থমথমে এবং আতঙ্কে রয়েছে। দ্রুত প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবিও করেন তারা।
এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় কি কারনে কাদির মোল্লা কোন পদক্ষেপ নেন না এমনটাই বলেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।
প্রিন্ট