কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
বিদ্যালয়ে মহান একুশে ফেব্রুয়ারী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উচ্চ শব্দে ডিজে গান বাজাতে নিষেধ করায় শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলের ডালা ভাংচুর করার অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের ধানকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
পরের দিন এ ঘটনায় এলাকাবাসী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়েন। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকাংশ কমে গেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চাঁদা তুলে সাউন্ড বক্স ভাড়া করে এনে বিদ্যালয়ে রাতভর উচ্চশব্দে বাজায়। এ সময় তারা বিদ্যালয়ে খিচুড়ি রান্না করেও খায়। সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দে বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাত ২টার দিকে ওই শিশুর বাবা উজ্জ্বল উকিল বিদ্যালয়ে গিয়ে বক্স বাজানো বন্ধ করে দেন। পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হামজা শেখ ও বহিরাগত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলের ডালা ভেঙে ফেলে। যে কারণে এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি। ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবিসহ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় ওই এলাকার তৌহিদুল ইসলাম ওরফে টিক্কা ও মশিউর রহমানের গ্রুপের সমর্থকরা দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়ে। যা চরমে পৌঁছায়। বিরোধ নিরসনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ডাকলেও অনেকেই উপস্থিত হননি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা চলছে। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকাংশ কমে গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টায় সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, ২০৫ জন শিক্ষার্থীর পরিবর্তে মাত্র ৮৫ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভয়ে বিদ্যালয়ে আসেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আন্তর্জাতিক দিবসের এ ধরণের ঘটনা শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা, বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত এবং অমার্জনীয় অপরাধ। ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ শেখের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। আমি ওই স্কুলের ছাত্র না। স্কুলের ছাত্ররা খিচুড়ি রান্না করেছিল। আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তবে একটি পক্ষ শুধু শুধু মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম শরীফ বলেন, শ্রদ্ধাঞ্জলি ভাংচুরের বিষয়টি আমি দেখিনি। তবে এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। ইউএনও স্যার ডেকেছেন। শুনে আসি, তারপর বিস্তারিত বলবো।’ তবে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একজন স্কুল শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষকসহ উভয়পক্ষকে অফিসে ডেকেছি। শুনে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রিন্ট