ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
একদল দুর্বৃত্ত দুষ্কৃতিকারীরা কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে। এ সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও করার সময় এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী আহত হয়েছেন। আজ সোমবার কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় মুজিবুল হক নামে এক আইনজীবীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্ত দুষ্কৃতিকারীরা।
সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আলিম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনা জানার পর আদালত চত্বরে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির (২০২৫-২৬) কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ উপলক্ষে আদালত চত্বরে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন প্রার্থীরা।
জানা গেছে, হামলার সময় নির্বাচন উপলক্ষে সাঁটানো পোস্টার, ব্যানার, চেয়ার ও নির্বাচনী অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন আইনজীবীর ব্যক্তিগত চেম্বারেও হামলা চালানো হয়। ১৫ থেকে ২০ জন দুষ্কৃতিকারী লাঠি সোটা নিয়ে হঠাৎ আদালত চত্বরে প্রবেশ করে প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটালেও হামলাকারী ও ইন্ধন দাতাদের পরিচয় নিয়ে মুখ খুলছেন না আইনজীবীরা।
তবে আইনজীবীদের অভিযোগ, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বার্থন্বেষী মহল এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান আইনজীবীরা। এদিকে এ ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনজীবীরা জানান, আজ বেলা ১২টার দিকে ৪০-৫০ জন বহিরাগত বিভিন্ন স্থান দিয়ে আদালত চত্বরে ঢোকে। এরপর তারা প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্পের চেয়ার, টেবিল, প্যান্ডেলসহ ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় ভাঙচুরের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী মুজিবুল হককে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আদালত চত্বরের এক চা-বিক্রেতা মমিনুর রহমান বলেন, যারা আদালত চত্বরে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করছিল তাদের মধ্যে কোনো আইনজীবী বা পরিচিত মুখ দেখা যায়নি। সবাই বহিরাগত ছিল। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তারা প্যান্ডেলের পাইপ, বাঁশ খুলেই ভাঙচুর শুরু করে।
এ বিষয়ে নির্বাচনে বিএনপিপন্থী সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহাতাবউদ্দিন বলেন, আমার ৩২ বছরের পেশাজীবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়নি। তবে এর আগে জানতে পেরেছিলাম পরাজিত শক্তিরা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
মাহাতাবউদ্দিন আরও বলেন, সব আইনজীবী যখন আদালত চত্বরে ব্যস্ত ছিলেন, তখনই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সবাই বহিরাগত হওয়ায় কাউকে চেনা যায়নি। তারা বিশেষ কোনো প্রার্থীকে টার্গেট করেনি। হামলাকারীরা সব প্রার্থীর ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে। তাতেই বোঝা যায় তাদের লক্ষ্য কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হতে না দেওয়া।
জামায়াতপন্থী সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ মহম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, গত ৫ আগস্টের পর কুষ্টিয়া আদালতের পরিস্থিতিকে অশান্ত করতে চাচ্ছে তারা। কারা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে যারা বুঝে গেছে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তারাই এটা করেছে বলে ধারণা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট