ইসমাইল হোসেন বাবু,স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুষ্টিয়ায় সড়কগুলোতে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে স্যালো ইঞ্জিনচালিত স্টিয়ারিং ট্রলি। সড়কের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে অবৈধ এ যানবাহনটি। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে সড়কে তিনটি শিশুর প্রাণ কেটে নিয়েছে ঘাতক এই যানবাহনটি। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সচেতন মহল।
মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলির ধাক্কায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং এসব যানবাহন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শহরের চৌড়হাস মোড়ে অবস্থিত মুকুল সংঘের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ছাড়াও মানববন্ধনে অংশ নেন অভিভাবক ও সচেতন মহল। তবে এতেও যেন টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাটিবোঝাই ট্রলির ধাক্কায় আরিয়ান জোয়ারদার (৪) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের কালিতলায় এ ঘটনা ঘটেছে। মিরপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত আরিয়ান উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের কালিতলা গ্রামের আরিফ জোয়ারদারের ছেলে।
মিরপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ট্রলির ধাক্কায় এক শিশু নিহত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
মিরপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অসিত কুমার বলেন, ‘মাটিবোঝাই ট্রলির ধাক্কায় আরিয়ান জোয়ারদার নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। ঘাতক স্টিয়ারিং ট্রলিটিকে স্থানীয়রা আটক করা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে আছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।
এর আগে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বাবাকে খাবার দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইটভর্তি ট্রলির ধাক্কায় শাকিব হোসেন (১২) নামে এক শিশু নিহত হয়। কুষ্টিয়া-প্রাগপুর মহাসড়কের মথুরাপুর ইউনিয়নের কৈপাল হিসনাপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শাকিব দৌলতপুর উপজেলার শালিমপুর গ্রামের আকবর মণ্ডলের ছেলে এবং তারাগুনিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
রবিবার কুষ্টিয়ায় স্কুলে যাওয়ার সময় দাদির সঙ্গে রাস্তা পার হতে গিয়ে বালুভর্তি ট্রলির ধাক্কায় ইব্রাহিম ইসলাম (৫) নামে এক শিশুশিক্ষার্থী নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন শিশুটির দাদি আনোয়ারা বেগম (৬৫)। রবিবার সকালে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের সদর উপজেলার চৌড়হাস ফুলতলা স্টেডিয়ামপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু ইব্রাহিম ইসলাম সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার আহসান হাবিবের ছেলে। সে প্রতীতি বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় ওইদিন ক্ষুব্ধ জনতা ট্রলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শহরের মুকুল সংঘের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উর্মিলা মুক্তি বলেন, ‘সড়কে চলাচল করতে খুবই ভয় হয়। ট্রলি ও বালুর গাড়ি বেপরোয়া চলে। রাস্তা পার হতে প্রায়ই বড়দের সাহায্য নিতে হয়। এতে অনেক সময় স্কুলেও দেরি হয়।’
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী বাবু বলেন, ‘হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরেও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন ও ট্রলি অবাধে চলাচল করছে। শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ বালির ট্রাক। এভাবে একটি শহর চলতে পারে না।’
অবৈধ যানবাহন চলাচলে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না অভিযোগ করে নিসচার কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি কে এম জাহিদ বলেন, ‘অবৈধ যানবাহনের ফলে সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল চলছে। অবৈধ অস্ত্র যেমন নিষিদ্ধ, আমি মনে করি অবৈধ প্রাণঘাতী এসব যানবাহনও নিষিদ্ধ করাও জরুরি।’
অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ, দাবি করে জাহিদ বলেন, ‘কুষ্টিয়া শহরে রাতদিন অবাধে চলছে বালুভর্তি ড্রাম ট্রাম ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি। এতে স্কুলগামী শিশুরা জীবন সংকটে পড়ছে। অন্তত দিনের বেলা ব্যস্ত সময়ে এসব বালুবাহী যানবাহন বন্ধ হওয়া উচিত।
প্রিন্ট