মোঃ ইমরান হোসাইন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমতলী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী মিনার নির্মাণ করে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছেন। এতে ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে তাদের বরাদ্দ থাকে না। দ্রুত উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় ২২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ২৯ টি ও ৭টি কলেজ রয়েছে। উপজেলার ১২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুইটি কলেজ ও ৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। অপর দিকে উপজেলার কোন মাদ্রাসায়ই শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন। এছাড়া যেগুলোতে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে। এগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের দু’এক দিন পূর্বে আমতলী কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারসহ অন্যান্য শহীদ মিনার ঘষা মাজা করা হয়। দিবস শেষ হয়ে গেলে কেউ ওই মিনারের আর খবর রাখে না। ওই শহীদ মিনারে গড়ে ওঠে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় বলে অভিযোগ করেন সচেতন নাগরিক আমতলী সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন বিশ্বাস।
সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গুরুদল বঙ্গবন্ধু নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, মানিকঝুঁড়ি মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কেওয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শাখারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
শাখারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লক্ষী রানী, জুয়াইরিয়া ও ফাহিম হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে দিবস পালন করতে হয়। তারা আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণে তাদের বরাদ্দ থাকে না। এগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবজ্ঞা। দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী তাদের।
কেওয়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নুরুজ্জামান হালিম বলেন, আর্থিক সংঙ্কটের কারনে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার করতে পারছি না। আর্থিক সংগতি হলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শিক্ষার্থীরা আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউল আলম বলেন, উপজেলার ৬টি বিদ্যালয় ছাড়া অবশিষ্ট বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ভাষা শহীদদের পরিচয় জানতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণ করবেন।
প্রিন্ট