শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষার, পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ
শহরের গলি দিয়ে হাতে টানা রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন একজন মেয়ে। একহাতে বই, আরেক হাতে বীণা। গানের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছেন তিনি। তার বাহনের প্রতিক রাজহাঁসও রয়েছে। যেন সরস্বতী দেবীর রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে।
কারুকার্য দেখে বোঝার উপায় নেই শুধুমাত্র কাগজ আর বাঁশের ব্যবহারে নির্মাণ করা হয়েছে এই সুন্দর প্রতিমা। শুধু তাই নয়, এটি নির্মাণে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী টানা ২১ দিন কাজ করেছেন। আর এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুবসমাজ নিজেরা চাঁদা দিয়ে নির্মাণ ব্যয় জুগিয়েছেন।
মঙ্গলবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোঁথড় চড়কবাড়ি মাঠে দেখা গেছে ব্যতিক্রম সরস্বতী দেবীর এই প্রতিমাটি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে মন্দিরে নানা আয়োজনে সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে। তবে এবার আলাদাভাবে নজর কেড়েছে সরস্বতী দেবীর ব্যতিক্রম এই প্রতিমা।
বোঁথড় চড়কবাড়ি এলাকার জাগতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক সমীর বিশ্বাস লিলু বলেন, ‘বর্তমানে সচরাচর মানুষ ডিজে প্যান্ডেল সাজিয়ে অনুষ্ঠান করে। আমরা যুব সমাজ মনে করলাম গতানুগতিক ছেড়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু করবো। পুরোনো কিছু ভাল জিনিস আছে, যা পুরোনো বলেই সব শেষ হয়ে যায় তা নয়। আমরা সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো মানুষের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। গত ২১ দিন ধরে এই প্রতিমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল দশটায় নির্মাণকাজ শেষ হয়। চাটমোহরের সন্তানরা যারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে তারা প্রায় ৮০ জন মিলে এটি নির্মাণ করেছে। আর এই ব্যতিক্রম প্রতিমা নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।
ভাস্কর্য শিল্পী কৈলাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই সরস্বতী পূজায় সবাই কিছু না কিছু কাজ করি। এবার নতুন কিছু করতে চেয়েছি। তাই শুধুমাত্র খবরের কাগজ, কার্টুন বক্স, বাঁশপাতার কাগজ ও বাঁশের ব্যবহার করে এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিমাটি নির্মাণ করেছি।’
রতন বর্মণ বলেন, ‘কলকাতা শহরে যেমন হাতে টানা রিকশা একটি ঐতিহ্য বহন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে আমাদের প্রাণের চাটমোহর শহরকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চাটমোহরেরই একজন মেয়ে গানের ক্লাস শেষে হাতে টানা রিকশায় চড়ে পুরোনো চাটমোহর শহরের গলি দিয়ে বাড়ি ফিরছেন-এমন বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
প্রিন্ট