ঢাকা , সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কালুখালীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার Logo বাঘায় বিস্ফোরক মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালাল বিরোধী অভিযান অব্যাহতঃ রোগীদের স্বস্তি, পুলিশের কঠোর অবস্থান Logo নড়াইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়েকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা Logo সদরপুরে গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনসহ ৩জন গ্রেপ্তার Logo রাজশাহীতে জমি দখল করতে না পেরে মিথ্যা মামলা, সংবাদ সম্মেলন Logo ফরিদপুরে পেনশনের টাকা হিসাবে যুক্ত হয়ে আবার ফেরৎ যাওয়ায় বিপাকে ৪৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি Logo ভূরুঙ্গামারীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, দামে হতাশ কৃষক Logo ছোটগল্পঃ জৈষ্ঠ্যের দিনগুলি Logo রাত থেকে নিখোঁজ, ভোরে ডোবায় মিললো কিশোরের দগ্ধ মরদেহ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

পুলিশের বাড়িতে ডাকাতি, রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্কে থাকে ভাঙ্গাবাসি

-ছবিঃ প্রতীকী।

মাহমুদুর রহমান তুরান, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সম্প্রতি ফাঁকাবাড়িতে কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার জের না কাটতেই পুলিশ সদস্যের বাড়িতে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ফ্ল্যাটে ঘুমিয়ে থাকা বৃদ্ধা মা ও ৪ শিশু-কিশোরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরে সবাইকে রশি দিয়ে বাধার পর একই সঙ্গে তার আপন দুই প্রবাসী ভাইয়ের ঘরেও তাণ্ডব চালায় ডাকাতদল। গতকাল রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে আসাদুল ইসলাম নামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে। আসাদুল গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের ফাঁজিলপুর গ্রামে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

 

নাম প্রকাশে গোপন রাখার শর্তে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি পাশের গ্রাম আলেখারকান্দায় ফাঁকা বাড়িতে এক বৃদ্ধ কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার রেশ না কাটতেই পুনরায় পুরো উপজেলায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেপরোয়াভাবে বাড়ছে। এদিন পুলিশের বাড়িতে ডাকাতির আগে ওই রাতেই আশপাশের কয়েকজনের বাড়িতে গ্রিল কেটে বসতঘরে ঢুকার চেষ্টা চালায় ডাকাতদল। কিন্তু পারেনি। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। রাত নামলেই ডাকাতদের ভয় ও আতঙ্কে কাটছে তাদের।

 

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত তখন ৩টা ২০ মিনিট। হঠাৎ বাড়ির বাইরে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন মুখোশধারীরা বাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করছেন। এ সময় প্রথমেই একজন দেয়াল বেয়ে উঠে সিসিটিভির বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে ফেলছেন। তারপর ওই ভিডিও ফুটেজটি অকেজো হয়ে গেলো। এরপর আরেকটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে- বাড়ির মেইন গেট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছেন ৩ জন মুখোশধারী। কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাটের দরজার কাছে লাল গেঞ্জি ও লোহার পাইপ হাতে নিয়ে দরজার সামনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজটি সজোরে আঘাত করলো। এরপর সেই ক্যামেরাও অকেজো করেন মুখোশধারীরা। তারপর ৩টা ৩১ মিনিটের পর ঘরে প্রবেশ করেই ডাকাতির তাণ্ডব চালায় ডাকাতদল। তবে, ডাকাত দল বাড়িতে প্রবেশ করার আগে সিসিটিভির ফুটেজ নষ্ট করলেও কয়েকটি ফুটেজ সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। ডাকাতির কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ আজ নেটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

 

সায়লা ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পেছনের সাইডের গ্রিলের তালা ও ফ্ল্যাটের দরজার লক ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ৫-৬ জন ডাকাতদল। এর মধ্যে একজনের মুখ খোলা ছিলো, বাকিরা মুখোশ পরিহিত ছিলো। তারা প্রথমেই সায়লার শাশুড়ির ঘরে ঢুকে। এরপর ফ্ল্যাটে থাকা অন্যান্য শিশু-কিশোরদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত সবাইকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পরে রুমে থাকা আলমারি ও আসবাবপত্র ভাংচুরসহ লুটপাটের তাণ্ডব চালায় তারা। এসময় শিশু-ছেলে-মেয়েদের অস্ত্রের মুখে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করা হয়। এক পর্যায়ে, ঘরের আলমারিতে রাখা সায়লা ও তাঁর ভাষুরের নগদ সোয়া ২ লাখ টাকা ও প্রায় ১২ ভরি স্বর্ণ লুট করে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।

 

আসাদুলের স্ত্রী সায়লা ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, গত রাতে ডাকাতির ঘটনার পর তার পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ এমন কোনো ঘটনা তারা মানতে পারছেন না। তাদের শিশু-কিশোরদের ভয় ও আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আজ সারাদিন ছেলে-মেয়েগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

 

থানার ওসি মোকছেদুর রহমান জানান, এক পুলিশ সদস্য ও তার আপন দুই ভাই ইরাক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সরজমিন গিয়ে কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশের তদন্তকার্য অব্যাহত রয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কালুখালীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

error: Content is protected !!

পুলিশের বাড়িতে ডাকাতি, রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্কে থাকে ভাঙ্গাবাসি

আপডেট টাইম : ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
মাহমুদুর রহমান তুরান, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

মাহমুদুর রহমান তুরান, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সম্প্রতি ফাঁকাবাড়িতে কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার জের না কাটতেই পুলিশ সদস্যের বাড়িতে ফিল্মি স্টাইলে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ফ্ল্যাটে ঘুমিয়ে থাকা বৃদ্ধা মা ও ৪ শিশু-কিশোরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরে সবাইকে রশি দিয়ে বাধার পর একই সঙ্গে তার আপন দুই প্রবাসী ভাইয়ের ঘরেও তাণ্ডব চালায় ডাকাতদল। গতকাল রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে আসাদুল ইসলাম নামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে। আসাদুল গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের ফাঁজিলপুর গ্রামে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

 

নাম প্রকাশে গোপন রাখার শর্তে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি পাশের গ্রাম আলেখারকান্দায় ফাঁকা বাড়িতে এক বৃদ্ধ কেয়ারটেকারকে নৃশংসভাবে হত্যার রেশ না কাটতেই পুনরায় পুরো উপজেলায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা বেপরোয়াভাবে বাড়ছে। এদিন পুলিশের বাড়িতে ডাকাতির আগে ওই রাতেই আশপাশের কয়েকজনের বাড়িতে গ্রিল কেটে বসতঘরে ঢুকার চেষ্টা চালায় ডাকাতদল। কিন্তু পারেনি। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। রাত নামলেই ডাকাতদের ভয় ও আতঙ্কে কাটছে তাদের।

 

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত তখন ৩টা ২০ মিনিট। হঠাৎ বাড়ির বাইরে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন মুখোশধারীরা বাড়িতে ঢুকার চেষ্টা করছেন। এ সময় প্রথমেই একজন দেয়াল বেয়ে উঠে সিসিটিভির বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে ফেলছেন। তারপর ওই ভিডিও ফুটেজটি অকেজো হয়ে গেলো। এরপর আরেকটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে- বাড়ির মেইন গেট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছেন ৩ জন মুখোশধারী। কিছুক্ষণ পর ফ্ল্যাটের দরজার কাছে লাল গেঞ্জি ও লোহার পাইপ হাতে নিয়ে দরজার সামনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজটি সজোরে আঘাত করলো। এরপর সেই ক্যামেরাও অকেজো করেন মুখোশধারীরা। তারপর ৩টা ৩১ মিনিটের পর ঘরে প্রবেশ করেই ডাকাতির তাণ্ডব চালায় ডাকাতদল। তবে, ডাকাত দল বাড়িতে প্রবেশ করার আগে সিসিটিভির ফুটেজ নষ্ট করলেও কয়েকটি ফুটেজ সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। ডাকাতির কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ আজ নেটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

 

সায়লা ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পেছনের সাইডের গ্রিলের তালা ও ফ্ল্যাটের দরজার লক ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ৫-৬ জন ডাকাতদল। এর মধ্যে একজনের মুখ খোলা ছিলো, বাকিরা মুখোশ পরিহিত ছিলো। তারা প্রথমেই সায়লার শাশুড়ির ঘরে ঢুকে। এরপর ফ্ল্যাটে থাকা অন্যান্য শিশু-কিশোরদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত সবাইকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পরে রুমে থাকা আলমারি ও আসবাবপত্র ভাংচুরসহ লুটপাটের তাণ্ডব চালায় তারা। এসময় শিশু-ছেলে-মেয়েদের অস্ত্রের মুখে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করা হয়। এক পর্যায়ে, ঘরের আলমারিতে রাখা সায়লা ও তাঁর ভাষুরের নগদ সোয়া ২ লাখ টাকা ও প্রায় ১২ ভরি স্বর্ণ লুট করে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।

 

আসাদুলের স্ত্রী সায়লা ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, গত রাতে ডাকাতির ঘটনার পর তার পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ এমন কোনো ঘটনা তারা মানতে পারছেন না। তাদের শিশু-কিশোরদের ভয় ও আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আজ সারাদিন ছেলে-মেয়েগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

 

থানার ওসি মোকছেদুর রহমান জানান, এক পুলিশ সদস্য ও তার আপন দুই ভাই ইরাক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সরজমিন গিয়ে কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশের তদন্তকার্য অব্যাহত রয়েছে।


প্রিন্ট