কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি
সারা দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ের শ্রমিক কর্মচারীদের ডাকে কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে যশোর স্টেশন হয়ে খুলনার সঙ্গে সারা দেশের দশটি ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও চলেনি একটিও। এ কারণে অনেক যাত্রী কাউন্টার থেকে টিকিট ফেরত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে চলে গেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে যশোর স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
যশোর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান জানান, সকালের দিকে অনেক যাত্রী ট্রেনের জন্য স্টেশনে এসেছিলেন। তাদের কেউ খুলনা, কেউ মংলা, বেনাপোল, রাজশাহী, ঢাকা বা অন্যান্য স্থানের যাত্রী। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি জানান, যারা ফিরে গেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে স্টেশন কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন। তারা টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে গেছেন।
তবে সকাল থেকে কতজন যাত্রী যশোর স্টেশন কাউন্টারে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়েছেন তার তথ্য আয়নাল হাসান দুপুর পর্যন্ত দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাঈদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে যশোর হয়ে খুলনা, বেনাপোল, ঢাকা ও রাজশাহীর দিক থেকে দশটি ট্রেন চলাচলের কথা ছিল। এগুলোর একটিও চলাচল করেনি।
তিনি জানান, স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে যেসব ট্রেন মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলেনি সেগুলো হলো খুলনা থেকে মংলাগামী বেতনা এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস, যমুনা সেতু হয়ে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস, চিলাহাটিগামী রকেট মেইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা এক্সপ্রেস, বেনাপোল থেকে ছেড়ে যায়নি মোংলা কমিউটার, ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস এবং রাজশাহী থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসেনি সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস।
মঙ্গলবার দুপুরে যশোর রেলস্টেশনে গিয়ে প্রায় যাত্রী শূন্য প্লাটফর্ম দেখা গেছে। দু’একজন যাত্রী ঘোরাঘুরি করছিলেন আর ট্রেনের খবর জানার চেষ্টা করছিলেন। তবে সমস্যার সমাধান বিষয়ে রেলওয়ে স্টাফ বা অন্যরা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
আফিফ হোসেন নামে খুলনার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেন, বাসেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে একটু স্টেশন ঘুরে গেলাম, যদি ট্রেন ছাড়ে।
চিকিৎসার জন্য খুলনায় যাচ্ছেন রমিজা খাতুন। তিনি রায়পাড়া এলাকার বাসিন্দা। রমিজা বলেন, আগে থেকে জানতাম না ট্রেন চলাচল বন্ধ। জানলে এখানে না এসে শংকরপুর (যশোর) বাস টার্মিনালেই চলে যেতাম। শেষ পর্যন্ত আমিসহ সব ট্রেন যাত্রীরই গন্তব্য হয়েছে শংকরপুর বাস টার্মিনাল, পালবাড়ী, মণিহার অথবা চাঁচড়া মোড়। এসব স্থান থেকেই বাসে করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা সবার।
এদিকে যশোর স্টেশনে পুলিশ সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বাড়তি এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার।
উল্লেখ্য, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসন না হওয়ায় সোমবার ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। পূর্ব ঘোষণানুযায়ী সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে চলে গেছেন রানিং স্টাফরা।
প্রিন্ট