মুন্সী সাদেকুর রহমান শাহীন, গোপালগঞ্জ ব্যুরো প্রধানঃ
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় দেওয়া বিশেষ বরাদ্দ লুটপাট হওয়ার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ। ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২, ও ৩ নং ওয়ার্ডের (সংরক্ষিত মহিলা সদস্য) রাবেয়া আক্তারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পায় দুদক।
দুদক কর্মকর্তারা সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের গোপালপুর অবদা রাস্তা হতে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যের বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি পর্যন্ত ২কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তার নির্মান কাজ। পাকুড়তিয়া পান্না শেখ এর বাড়ী হইতে ছোট ডুমরিয়া দেবেন মন্ডলের বাড়ীর পর্যন্ত ৪৭ লক্ষ ২২হাজার টাকা বরাদ্দে এইচবিবি রোড, মাটির রাস্তা নির্মান ও প্যালাসাইডিং করণ। ৬লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকুড়তিয়া উত্তরপাড়া ৭৬ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ উন্নয়ন ও ২লক্ষ ২০হাজার টাকা বরাদ্দে পাকুড়তিয়া পারঝনঝনিয়া আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠ উন্নয়ন সহ বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজিমনে পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন কালে কাজসমূহ সঠিকভাবে করা হয়নি মর্মে দেখতে পেয়েছেন। দুদক অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম হওয়া প্রকল্প গুলোর মধ্যে ২কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের বড় কাজটির সিপিসি ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আহমেদ, তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও শুধু নামমাত্র বালু ফেলে রেখেছেন। রাস্তার পাশে ও উপরে মাটি দেয়া হয়নি। তিন কিলোমিটার রাস্তায় কোন ব্রিজ বা কালভার্ট না থাকায় বিপুল কৃষি জমি অনাবদি হয়েছে এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। শ্রমীকদের দিয়ে মাটি না কেটে ড্রেজিং করে বালি ফেলায় এলাকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে ফসলি জমি কেটে বালু ভরাট করা হয়েছে।
রাস্তার দুই পাশে বুল্লা (গাছের খুটি) ও ব্যারেলের টিন দ্বারা প্যালাসাইডিং করার কথা থাকলেও করা হয়নি। কিছু যায়গায় বাশ দিয়ে করা হয়েছে যা দেবে গিয়ে রাস্তা ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের সিডিউলে বর্ণিত রাস্তার উচ্চতা ও ব্যাসার্ধ ব্যাপক ভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন শেষে দুদক কর্মকর্তারা টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পেয়েছে কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না হলেও ২কোটি ৪০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের অধিকাংশ টাকাই উত্তোলন করেছে চেয়ারম্যান আলী আহমেদ। অপর দিকে ওয়ার্ড মেম্বার কবির তালুকদার সংশ্লিষ্ট মাষ্টার রোলে প্রকল্পের সিপিসি (ইউপি সদস্য) রাবেয়া আক্তারের স্বাক্ষর না নিয়ে নকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে উক্ত কাজের সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে নিয়েছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ ও ইউপি সদস্য কবির তালুকদারে সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের মতামত পাওয়া সম্ভব হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকায় দেওয়া বিশেষ বরাদ্দ লুটপাট হওয়ার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা কার্যালয় থেকে দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে। অনুমতি পাওয়া গেলে লুটপাট কারিদের নামে মামলা রুজু করা হবে।
এবিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. মঈনুল হক দৈনিক সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, দুদক যদি অনিয়ম পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের নামে মামলা করুক। প্রকল্প গুলো যথা নিয়মে বাস্তবায়িত হয়েছে বলেই আমরা বিল ছাড় করেছি।
প্রিন্ট