আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহী অঞ্চলে আর মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আলু উঠতে শুরু করবে। জমিতে আলু পরিচর্যায় শেষ সময়ে ব্যস্ততা সময় পারছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারো আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছরে আলুর দামে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। সাধারণ ভোক্তা আলু সর্বোচ্চ ৭০ হতে ৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। এতে সাধারণ মানুষ আলুর দামে নাভিশ্বাস ফেললেও কৃষকদের মাঝে বেশ স্বস্থি দেখা গেছে। আলুর দাম আকাশ চুম্বি হওয়ায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে মোটা অংকে লাভবান হয়েছে। তবে তুলনামূলক ভাবে কৃষক এবারের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বেশী দামের আশায় আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু আলুর বর্তমান বাজার মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। জমি লীজ গ্রহণ হতে শুরু করে আলু আবাদে সারের ব্যবহার, কৃষকদের মজুরীসহ অন্যান্য খরচ বেশী হওয়ায় খরচ উঠানো নিয়ে দু:শ্চিতায় পড়েছে কৃষকরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলায় আলু চাষ হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আলুর দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার কৃষকরা আবাদ বাড়িয়ে দেয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। তানোরে প্রায় ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের আলু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতিবিঘা আলুর উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৮০ হতে ৯০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা ফলন হয় ১০০ থেকে ১২০ মন।
তানোর উপজেলার তালন্দ ইউপি এলাকার আলু চাষী গোলাম রাব্বানী জানান, এবার ১৫ বিঘা আলু আবাদ করেছি। এবার জমিতে আলুর গাছে বেশ ভালো আছে। আবহাওয়া খুব সুন্দর থাকায় আলুর চাষে তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি। যার ফলে আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, ‘গতবার কোল্ড স্টোরে রেখে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। এবার আলুর ফলন বেশী আবার খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। সেই তুলনায় আলু খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০ হতে ২৫ টাকা। আমাদের আলু উঠতে আরো সময় লাগবে ফলে আলুর দাম তেমন পাবো না। দাম কি হবে সেটাও বলা মুশকিল। ফলে এবারের যে খরচ তা উঠা নিয়ে বেশ চিন্তিত আছি।’
তিনি দাম নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গত বছর যা লাভ করেছিলাম এবার তা পুরোটায় শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
তালন্দ ইউপির আলু চাষী মাহাবুর রহমান মাহাম জানান, আমি গতবার ১০ বিঘা আবাদ করেছিলাম এবারো ১০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। এবার আলুর যে দাম ও আবাদ খরচ তাতে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। গতবার ১০ বিঘায় ৬ লাখ টাকা মতো লাভ হয়েছিলো। এবার আলুর উৎপান খরচ ও দাম নিম্নমুখি হওয়ায় পথে বসতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
কামারগাঁ ইউপির মালার মোড়ের আব্দুল বলেন, এবার ৪ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে আলুর যা দাম তাতে খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার জানান, গতবারের চাইতে আমার ব্লকে আলুর আবাদ অনেক বেশী। দাম ভালো পাবার আশায় অনেকে বেশী করে আবাদ করেছে। এবারের মৌসুকে আলুর আবাদে আবহাওয়া বেশ উপযোগী। তেমন কোন রোগ বালাই দেখা যায়নি। তবে আলুর যা দাম তা নিয়ে হতাশায় আছেন কৃষকরা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কৃষকরা জানান, এবার আলু আবাদে খরচ বেশী। কোল্ড স্টোরে রেখে আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে এবার কোল্ড স্টোরের মালিকরা কেজি প্রতি খরচ ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করেছেন। অপরদিকে এবার আলুর দাম নিন্মমুখি। ফলে এবার আমাদের প্রচুর লোকসান হবে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, গতবছর উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছিলো এক হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। এবার তা বেড়ে ২ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর গাছ বেশ ভালো আছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের আলু চাষীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেটা তারা বাস্তবায়ন করছেন। এবার আশা করা যায় আলুর বাম্পার ফলন হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানান, গতবারের চাইতে রাজশাহী অঞ্চলে এবার আলুর বেশী আবাদ হয়েছে। এবার আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩৫ হাজার হেক্টর। এবার তা ছাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আমি নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করেছি। তাতে দেখা গেছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমিতে আলুর গাছ ভালো আছে। রাজশাহী কৃষি অফিসের নির্দেশনায় উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। আশা করা যায় এবারও আলুর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
প্রিন্ট