লিয়াকত হোসেন লিংকন, স্টাফ রিপোর্টার
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির নাম দিদার হোসেন। তিনি ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো.আব্দুর রহমানের বেয়াই। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। সেচের অভাবে ১৫০ একর বোরো আবাদের জমি অনাবাদীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রুত খালের বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এলজিইডির খালে দুটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালী দিদার হোসেন। খালের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)র চারটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৫০ একর বোরো আবাদের জমি রয়েছে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুই শতাধিক কৃষক। জমি চাষ দিয়েপানির অভাবে ধান রোপন করতে পারছেন না অনেকে। আবার কেউ বোরো আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এছাড়া দিদার হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার হিন্দুদের জমি দখলের চেষ্টা, কৃষকদের চাষাবাদে বাঁধা, মারধর, লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হুমকি দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি মাহমুদপুর-কৃষ্ণপুর বিলে ‘মাতবর এগ্রো এন্ড ফিশারিজ’ মৎস্য প্রকল্পের সাইন বোর্ড টাঙিয়ে হিন্দুদের জমি মাঝে রেখে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তৎকালীন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বাঁধায় তা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাঁর বেয়াই (ছেলের শ্বশুর) মো. আব্দুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী হওয়ায় আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেন দিদার। হিন্দুদের জমি দখলে নিতে ফের একই স্থানে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত টাকায় নয়, ব্যক্তি স্বার্থে সরকারি প্রকল্পের টাকায়। আওয়ামী লীগের সাবেক ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীর সুপারিশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক গোপাল বিশ্বাস জানান, তিনি দুই সপ্তাহ আগে জমি চাষ করে রেখেছেন। কিন্তু খালে বাঁধদিয়ে মাছ চাষ করায় পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। পানির অভাবে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। এতে বোরো আবাদে পিছিয়ে পড়ায় ফলন কম হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সুধীর বিশ্বাস, আদরী বিশ্বাস ও সীমা বিশ্বাস জানান, প্রভাবশালী দিদার হোসেন সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে তারা জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। জমি অনাবাদীর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না।প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
স্থানীয় একাধিক কৃষক ও জমির মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দিদার হোসেন হিন্দুদের জমি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করে আসছিলেন। তবে কৃষকদের বাঁধার মুখে তা করতে পারেন নি। কিন্তু তাঁর বেয়াই আব্দুর রহমান মন্ত্রী হওয়ার পর একই স্থানে সরকারি প্রকল্পের টাকায় বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে চাষাযোগ্য জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এক পর্যায় বাধ্য হয়ে দিদার হোসেনের কাছে ই তাদের ওই ফসলি জমি বিক্রি করতে হবে।
অভিযুক্ত দিদার হোসেনের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করলে রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কাশিয়ানী উপজেলা বিএডিসির (ক্ষুদ্রসেচ) সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘ওই খালের আওতায় আমাদের চারটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। যার আওতায় প্রায় ২শ’ একর জমি রয়েছে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসছি এবং বাঁধ অপসারণের জন্য বলে আসছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত বলেন, খালে কোন ভাবে বাঁধ কিংবা নেট দিয়ে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ করা যাবেনা। বাঁধ অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রিন্ট