আবদুস সালাম তালুকদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের সবুজের চাদরে মুড়া গ্রাম লক্ষীপুর সেখানেই বসবাস মোসাঃ সুমাইয়া সাথীর। সে মোঃ সাজেমানের মেয়ে। দুই ভাই বোনের মধ্য সুমাইয়া বড়। সুমাইয়া এবারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় নওগাঁ সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েও অর্থ সংকটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসিতে গোল্ডেন এ প্লাস, রহনপুর রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসিতে গোল্ডেন এ প্লাস, জ্ঞান চক্র একাডেমি থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস ও রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পাস করা মোসাঃ সুমাইয়া সাথী জানান, বাসার পাশে লক্ষীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যখন পিএসিতে গোল্ডেন পাই তখন থেকে লেখাপড়ার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়, এরপর বাসা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রাবেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
নিয়মিত এই ৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেই ক্লাস করছি। আমাদের ভিটে মাটি বলতে বাসার ৩ শতক জায়গাটুকু বাবা পরের ক্ষেতে দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালাতে হিমসিম খাই, কতো দিন সকালে না খেয়ে স্কুল গেছি আবার বিকেলে এসে বাসায় খেয়েছি, অর্থের অভাবে আমি কোন কোচিং বা প্রাইভেট পড়তে পারিনি। আমার এই লিখা পড়ায় সব সময় উৎসাহ যোগিয়েছে আমার শিক্ষকরা। তবে ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখেছি ডাক্তার হয়ে মানব সেবাই নিয়োজিত করবো নিজেকে।
কিন্তু আগামী ২ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে আমার ভর্তি সেই ভর্তির টাকা এখন পর্যন্ত আমার পরিবার যোগান দিতে পারিনি, জানিনা আমার মেডিকেল কলেজ ভর্তি হওয়া হবে কি না। কারণ এতো ব্যয়বহুল টাকা আমার পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারি- বেসরকারি ও বিত্তবানদের থেকে কোন সয়তা পেলেই কেবল আমার মেডিকেল ভর্তি হওয়া সম্ভব। নতুবা আমার ইচ্ছে স্বপ্ন সব ছায় হয়ে যাবে।
সুমাইয়ার মা মোসাঃ হাবিবা খাতুন জানান, আমার ২ ছেলে মেয়ের মধ্যে সুমাইয়া বড়। আমরা খুব কষ্ট করে মেয়েকে লেখা পড়া করিয়েছি। অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে মেয়ে তাতে রাজি ছিলো না। সে একটি কথায় বলতো আম্মা আমি লেখা পড়া করে মানুষের মত মানুষ হবো তারপর বিয়ে করবো। অর্থে অভাবে তাকে কোন কোচিং বা প্রাইভেটে পড়াতে পারিনি। নিজে নিজে পড়ে আজ মেডিকে চান্স পেয়েছে। কিন্তু অর্থে অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সুমাইয়ার মেডিকেল ভর্তি। কেউ যদি সহায়তা করতো তবে আমার মেয়ের স্বপ্ন পুরুন হতো।
সুমাইয়ার বাবা সাজেমান আলী জানান, আমি পারিনি শিক্ষা অর্জন করতে, যখনই কোন শিক্ষিত মানুষকে দেখতাম তখন আমি স্বপ্ন পুষতাম যদি আমার ছেলে মেয়েকে আমি শিক্ষিত করতে পারি। সুমাইয়া ছোট থেকেই মেধাবী ছিলো, তাই তাকে নিয়ে স্বপ্নটা দিগুণ ছিলো। মেয়ে রাজশাহী নিউ ডিগ্রি গভার্মেন্ট কলেজে চান্স পেয়েছিল কিন্তু অর্থের অভাবে সেখানেও ভর্তি করতে পারিনি। তবে সুমাইয়া আমাকে বার বার বলতো বাবা আমি তোমার স্বপ্নটা একদিন আমি পূরণ করে দিবো। কিন্তু মেডিকেলে চান্স পেয়েও আমার আনন্দটা ছিলো দ্বিগুণ কিন্তু তা এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। সংসার চালাতেই আমি হিমসিম খাচ্ছি। সরকার বা সমাজের বিত্তবানেরা যদি কেউ আমার মেয়ের পাশে দাড়ায় তবে আমার মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হবে আর আমিও একজন গর্বিত বাবা হবো।
রহনপুর ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, আমার বাসার পাশেই তার বাসা মেয়েট অর্থে অভাবে ঠিকমত স্কুল যেতে পারেনি, সে নিজের অদম্য চেষ্টায় মেডিকেল চান্স পেয়েছে। আমিও সহযোগিতা করবো এবং সমাজের বিত্তবানদের ও অনুরোধ করছি তার পাশে দাঁড়াতে।
জ্ঞান চক্র একাডেমির পরিচালক সারওয়ার হাবিব বলেন, আমার স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মোসাঃ সুমাইয়া সাথী আমার স্কুলে লেখা পড়ার করেছে। এবং এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলো। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হওয়া নিয়ে চিন্তায় আছে। আমরা সবাই যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই তাহলে মেয়েটা সবার মুখ উজ্জ্বল করবে ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যা বলেন, দরিদ্র, মেধাবী এবং লেখাপড়ায় ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু টাকা-পয়সার জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছেন না এমন শিক্ষার্থীদের পাশে অবশ্যই আমরা দাঁড়াব। সুমাইয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন ইউএনও।
প্রিন্ট