সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের অঞ্চল ফরিদপুর। জেলার নয় উপজেলার মধ্যে আটটিতে এর আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে জেলার দেড় লক্ষাধিক চাষি তাদের জমিতে পাটের চাষ করেছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে জেলায় ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এর বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়। আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল) । অর্থাৎ গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশি জাত) আবাদ হয়। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের পাট বীজ ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।
ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার ঘোষ জানান, চৈত্রের শেষ ও বৈশাখ মাস থেকে ফরিদপুরে পাটের আবাদ শুরু হয় আর কাটা হয় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। এই সময় খরা ও বৃষ্টি হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট ভালো হয়।
তিনি আরো বলেন, জেলায় প্রতিবছরই নতুন নতুন চাষি পাটচাষে যুক্ত হচ্ছে।
জেলার বোয়ালমারী উপজেলার পাটচাষিরা বলেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্য মূল্য পায়নি। তবে গত দুই বছর ধরে তুলনামূলক ভাবে ভালো দর পাচ্ছি।
এই উপজেলার ঘোষপুরের পাট চাষি আশুতোষ বলেন, গত বছরের তুলনা দুই হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ক্ষেতে পাটের ফলনও বেশ হয়েছে। আশা করছি, উৎপাদন ভালো হবে।
জেলার পাট চাষের অন্যতম নগরকান্দার পাটচাষি আনিসুর রহমান, গফ্ফার হোসেন, শামিম মোল্লাহসহ অনেকেই জানান, গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ বেশি করেছি, আশার করছি ভালো দামও পাবো। তবে বপনের সময় কিছুটা চিন্তায় ছিলাম, প্রচণ্ড রোদের কারনে। তবে এখন ভালো বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের পাট ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে আশা করছি।
জেলা অন্যতম পাটের বাজার বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার। সেখানকার পাট ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম, নাছিরুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যাবসায়ী জানান, পাটের উৎপাদন ভালো হলে দর কিছুটা কমবে। এতে পাটকলগুলো ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবে।
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী জানান, ফরিদপুরের আবহাওয়া পাট আবাদের জন্যে উপযোগী। এ জেলার মাটি পাট চাষে শ্রেষ্ঠ, যে কারণে এখানকার পাটের গুনগত মান ভালো।
তিনি বলেন, এবারের বপন মৌসুমে প্রচণ্ড খরা থাকায় চাষীদের দুই থেকে তিন বার সেচ দিতে হয়েছে, যে কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে তাদের।
ফরিদপুর চেম্বর অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, পাটকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে। জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে ২০টি পাট কল তৈরী হয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার বেকারদের কর্মস্থানের সুযোগ হয়েছে।
তার দাবি, সরকার ফরিদপুর অঞ্চলের পাট পণ্যে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা করলে পাট চাষীরা আরো বেশি লাভবান হবেন ।
প্রিন্ট