ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নড়াইলে তিন বৃক্ষপ্রেমিকের নিরব ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত!

নড়াইল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের পার্শ্বে সারি সারি বিভিন্ন গাছ শোভা পাচ্ছে।

নড়াইল শহরের বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যেন নিয়েছেন তারা। বৃক্ষরোপন করেই থেমে যান না, গাছ লাগানোর সময় ছাগল-গরুসহ বিভিন্ন উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে খাঁচা দিয়ে ঘিরে দেন এবং পলিথিন দিয়ে গাছের গোড়া মুড়িয়ে দেন।

যতদিন প্রয়োজন নিজেরাই গাছের গোড়ায় পানি দেন। কখনও সেই গাছ মরে গেলে পূনরায় নতুন একটি গাছ রোপনের ব্যবস্থা করেন। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো বিদেশী বা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপন করেন না।

শহরের পৌর গোরস্থান এলাকা, সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্বে, জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও বালক বিদ্যালয় মাঠের পার্শ্বে, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের মুসলিম হোস্টেলের পার্শ্বে আসলেই চোখে পড়বে এসব গাছের সারি। বিভিন্ন গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, কদবেল, কাঠ বাদাম, চালতে, আমড়া, জামরুল, আমলকি, পলাশ, কদম, বকুল।

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তারা নীরবে নিজেদের অর্থ এবং শ্রমে পরিবেশবান্ধব এবং সেবামূলক কাজটি করে যাচ্ছেন। বৃক্ষপ্রেমি এ তিন জন হলেন, শহরের মহিষখোলা এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবুল কাশেম তারিক বিল্লাহর ছেলে নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মুন্সী আব্দুল মান্নানের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কার্যালয়, নড়াইলের এসিসট্যান্ট রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাবেক) নজরুল ইসলাম সেখ।

প্রচার বিমুখ পরস্পর বন্ধু খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল (০১৯১৬-৪৯৬৭৭৬) জানান, ক্লান্ত পথিক দেশী গাছের নীচে একটু আশ্রয় নিবে, গাছে গাছে পাখিরা বসবে, ফল খাবে, সাধারন মানুষও ফল পেড়ে খাবে, এ ধরনের স্বপ্ন নিয়ে সড়কের ক্ষতি না করে সরকারি জায়গার ওপর ১৩ বছর পূর্বে প্রথম আমরা দু’জন অধিকাংশই ফলজ গাছ লাগানো শুরু করি।

পরে নজরুল সাহেব যুক্ত হয়ে ৭ বছর একসাথে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে লাগানো অধিকাংশ গাছই বাঁচতো না। গাছের পেছনে পরিচর্চা এবং সময় দিতে হয়।

এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার গাছ লাগিয়েছি, বেঁচেছে তিন শতাধিক। প্রায় আড়াই’শ গাছে ফল ও ফুল ধরেছে। এ কাজে স্থানীয় জনগন এগিয়ে আসলে শহরের বিভিন্ন সড়কের দু’পার্শ্বে সবুজ বনায়ন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে নড়াইল বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রশিদ জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে গাছের চারা নিতে চায় তাহলে আমরা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখবো। কারন তারা নিঃ শ্বার্থভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার আহবায়ক খন্দকার শওকত বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্যের জন্য যে বনায়ন প্রয়োজন সে তুলনায় হচ্ছে না। তাদের অর্থ এবং নিঃশ্বার্থ শ্রমে সমাজ উপকৃত এবং তাদের দেখে দেশের মানুষও বৃক্ষরোপনে উৎসাহিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফলজ গাছের ফল একদিকে যেমন মানুষ খাচ্ছে আবার পাখিদেরও খাদ্যের চাহিদা মিটছে। পাখিদের খাদ্যের অভাবে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিঃস্বার্থ এই বৃক্ষপ্রেমিদের তিনি অভিনন্দন জানান।

এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নড়াইল শহরে যারা এ গাছ রোপন করছেন তাদের ব্যাপারে জানা নেই। অবশ্যই খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। তাদের গাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন পদক্ষেপ নিবে। এছাড়া বনবিভাগ থেকে যদি তারা ফলজ ও বনজ গাছের চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে অবশ্যই তাদের দেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

নড়াইলে তিন বৃক্ষপ্রেমিকের নিরব ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত!

আপডেট টাইম : ০৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
খন্দকার সাইফুল্লা আল মাহমুদ, নড়াইল প্রতিনিধিঃ :

নড়াইল শহরের বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যেন নিয়েছেন তারা। বৃক্ষরোপন করেই থেমে যান না, গাছ লাগানোর সময় ছাগল-গরুসহ বিভিন্ন উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে খাঁচা দিয়ে ঘিরে দেন এবং পলিথিন দিয়ে গাছের গোড়া মুড়িয়ে দেন।

যতদিন প্রয়োজন নিজেরাই গাছের গোড়ায় পানি দেন। কখনও সেই গাছ মরে গেলে পূনরায় নতুন একটি গাছ রোপনের ব্যবস্থা করেন। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো বিদেশী বা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপন করেন না।

শহরের পৌর গোরস্থান এলাকা, সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্বে, জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও বালক বিদ্যালয় মাঠের পার্শ্বে, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের মুসলিম হোস্টেলের পার্শ্বে আসলেই চোখে পড়বে এসব গাছের সারি। বিভিন্ন গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, কদবেল, কাঠ বাদাম, চালতে, আমড়া, জামরুল, আমলকি, পলাশ, কদম, বকুল।

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তারা নীরবে নিজেদের অর্থ এবং শ্রমে পরিবেশবান্ধব এবং সেবামূলক কাজটি করে যাচ্ছেন। বৃক্ষপ্রেমি এ তিন জন হলেন, শহরের মহিষখোলা এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবুল কাশেম তারিক বিল্লাহর ছেলে নড়াইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মুন্সী আব্দুল মান্নানের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কার্যালয়, নড়াইলের এসিসট্যান্ট রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাবেক) নজরুল ইসলাম সেখ।

প্রচার বিমুখ পরস্পর বন্ধু খন্দকার আল মুনসুর বিল্লাহ এবং মুন্সী কামরুজ্জমান বুলবুল (০১৯১৬-৪৯৬৭৭৬) জানান, ক্লান্ত পথিক দেশী গাছের নীচে একটু আশ্রয় নিবে, গাছে গাছে পাখিরা বসবে, ফল খাবে, সাধারন মানুষও ফল পেড়ে খাবে, এ ধরনের স্বপ্ন নিয়ে সড়কের ক্ষতি না করে সরকারি জায়গার ওপর ১৩ বছর পূর্বে প্রথম আমরা দু’জন অধিকাংশই ফলজ গাছ লাগানো শুরু করি।

পরে নজরুল সাহেব যুক্ত হয়ে ৭ বছর একসাথে কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে লাগানো অধিকাংশ গাছই বাঁচতো না। গাছের পেছনে পরিচর্চা এবং সময় দিতে হয়।

এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার গাছ লাগিয়েছি, বেঁচেছে তিন শতাধিক। প্রায় আড়াই’শ গাছে ফল ও ফুল ধরেছে। এ কাজে স্থানীয় জনগন এগিয়ে আসলে শহরের বিভিন্ন সড়কের দু’পার্শ্বে সবুজ বনায়ন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে নড়াইল বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রশিদ জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে গাছের চারা নিতে চায় তাহলে আমরা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখবো। কারন তারা নিঃ শ্বার্থভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নড়াইল জেলা শাখার আহবায়ক খন্দকার শওকত বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্যের জন্য যে বনায়ন প্রয়োজন সে তুলনায় হচ্ছে না। তাদের অর্থ এবং নিঃশ্বার্থ শ্রমে সমাজ উপকৃত এবং তাদের দেখে দেশের মানুষও বৃক্ষরোপনে উৎসাহিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ফলজ গাছের ফল একদিকে যেমন মানুষ খাচ্ছে আবার পাখিদেরও খাদ্যের চাহিদা মিটছে। পাখিদের খাদ্যের অভাবে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিঃস্বার্থ এই বৃক্ষপ্রেমিদের তিনি অভিনন্দন জানান।

এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নড়াইল শহরে যারা এ গাছ রোপন করছেন তাদের ব্যাপারে জানা নেই। অবশ্যই খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। তাদের গাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসন পদক্ষেপ নিবে। এছাড়া বনবিভাগ থেকে যদি তারা ফলজ ও বনজ গাছের চারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে অবশ্যই তাদের দেওয়া হবে।


প্রিন্ট