ঢাকা , সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মহম্মদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫, অর্ধশত বসতঘর ভাংচুর Logo নড়াইলের আমাদা কলেজে ষষ্ঠবার্ষিকী পিঠাউৎসব অনুষ্ঠিত Logo কোটালীপাড়ায় স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক না থাকায় ১০বছর শিক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা Logo ফরিদপুর সদর উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী ও খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ Logo নগরকান্দায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে দুই গ্রাম পুরুষ শূন্য Logo বনপাড়া পৌর এলাকায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমি উদ্ধার অভিযান শুরু Logo মুকসুদপুরে মাতৃস্নেহ প্রতিবন্ধী ও যুব নারী উন্নয়ন সংস্থার আলোচনা সভা এবং কম্বল বিতরণ Logo নলছিটিতে অজ্ঞাত শিশুর লাশ উদ্ধার Logo নলডাঙ্গায় গণপিটুনিতে নিহত-১
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

পাওনা টাকার দাবিতে অধ্যক্ষর বাড়িতে ইট ভাটা মালিকদের অবস্থান

ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার

পাওনা প্রায় দেড় কোটি টাকার দাবিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়ি ও কলেজে অবস্থান নেন কয়েকজন ইটভাটার মালিক।

 

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা শহরের মাস্টারপাড়ায় ছাদিকুজ্জামানের বাড়িতে অবস্থান নেন ইটভাটার মালিকরা। এরপর তারা ছাদিকুজ্জামান যে কলেজের অধ্যক্ষ, সেই কলেজে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা কলেজটির শিক্ষকদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান।

 

রিফায়েতপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছরে তার ভাটা থেকে বাকিতে ৩২ লাখ টাকার ইট কিনেন ছাদিকুজ্জামান। নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা দিতে গড়িমসি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাদিকুজ্জামান পালিয়ে যান। টাকার জন্য তাকে খোঁজা হচ্ছে। কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

 

একই অভিযোগ করেন সাদীপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, “আমার ভাটা থেকে ২২ লাখ টাকার ইট নেন ছাদিকুজ্জামান। আজ না কাল করে টাকা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা তার ও তার বাবার বাড়ি এবং কলেজে গিয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।”

 

ইটভাটার মালিকেরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতেন ছাদিকুজ্জামান খান সুমন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পাকাকরণ কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি বিলাসবহুল বাসভবন নির্মাণ করেছেন। গত ৮ থেকে ১০ বছরে ঠিকাদারি কাজ ও বাসভবন নির্মাণের জন্য দৌলতপুরের বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে বাকিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ইট কিনে নেন ছাদিকুজ্জামান। এদের মধ্যে কয়েকজন ইটভাটার মালিককে চেক দেওয়া ব্যাংক থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ছাদিকুজ্জামান আত্মগোপনে চলে যান।

 

টাকা না পেয়ে ইটভাটার মালিকেরা ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়িতে যান। এ সময় ইটভাটার মালিকরা সুমনের বাবা মো. মাফিকুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ছাদিকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে ইটভাটার মালিকদের জানান মো. মাফিকুজ্জামান খান। এরপর ইটভাটার মালিকরা দৌলতপুর কলেজে যান। ওই সময় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভা চলছিল। সভা চলাকালে কলেজের পরিচালনা কমিটির কাছে তারা মৌখিক অভিযোগ দেন।

 

স্বরূপপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক নুরুল ইসলামও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ছাদিকুজ্জামানের কাছে ১৬ লাখ টাকা পাব। টাকার জন্য তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল ধরেন না। টাকা না পেয়ে হয়রানির শিকার হয়ে অবশেষে আজ অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।”

 

ইটভাটার মালিকদের পাওনা টাকা না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকবার ছাদিকুজ্জামানের মোবাইলে কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

আব্দুস সাত্তার নামে অপর ইটভাটার মালিক জানান, “ছাদিকুজ্জামানের কাছে তিনি ইট বিক্রির ৮ লাখ টাকা পাবেন।” শুধু তিনি একাই নন, দৌলতপুরের অন্তত ১১ জন ইটভাটার মালিক ছাদিকুজ্জামানের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন।

 

ইটভাটার মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আলাউদ্দিন বাদল বলেন, “ইটভাটার মালিকরা দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন। এ বিষয়ে তারা অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

 

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “কিছু ইটভাটার মালিক পাওনা টাকার দাবিতে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়ি ও কলেজে অবস্থান নেন বলে খবর পেয়েছি। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

মহম্মদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫, অর্ধশত বসতঘর ভাংচুর

error: Content is protected !!

পাওনা টাকার দাবিতে অধ্যক্ষর বাড়িতে ইট ভাটা মালিকদের অবস্থান

আপডেট টাইম : ১২ ঘন্টা আগে
ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার :

ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার

পাওনা প্রায় দেড় কোটি টাকার দাবিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়ি ও কলেজে অবস্থান নেন কয়েকজন ইটভাটার মালিক।

 

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা শহরের মাস্টারপাড়ায় ছাদিকুজ্জামানের বাড়িতে অবস্থান নেন ইটভাটার মালিকরা। এরপর তারা ছাদিকুজ্জামান যে কলেজের অধ্যক্ষ, সেই কলেজে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা কলেজটির শিক্ষকদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান।

 

রিফায়েতপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছরে তার ভাটা থেকে বাকিতে ৩২ লাখ টাকার ইট কিনেন ছাদিকুজ্জামান। নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা দিতে গড়িমসি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাদিকুজ্জামান পালিয়ে যান। টাকার জন্য তাকে খোঁজা হচ্ছে। কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

 

একই অভিযোগ করেন সাদীপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক মামুনুর রহমান। তিনি বলেন, “আমার ভাটা থেকে ২২ লাখ টাকার ইট নেন ছাদিকুজ্জামান। আজ না কাল করে টাকা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা তার ও তার বাবার বাড়ি এবং কলেজে গিয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।”

 

ইটভাটার মালিকেরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতেন ছাদিকুজ্জামান খান সুমন। তিনি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পাকাকরণ কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি বিলাসবহুল বাসভবন নির্মাণ করেছেন। গত ৮ থেকে ১০ বছরে ঠিকাদারি কাজ ও বাসভবন নির্মাণের জন্য দৌলতপুরের বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে বাকিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ইট কিনে নেন ছাদিকুজ্জামান। এদের মধ্যে কয়েকজন ইটভাটার মালিককে চেক দেওয়া ব্যাংক থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ছাদিকুজ্জামান আত্মগোপনে চলে যান।

 

টাকা না পেয়ে ইটভাটার মালিকেরা ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়িতে যান। এ সময় ইটভাটার মালিকরা সুমনের বাবা মো. মাফিকুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ছাদিকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে ইটভাটার মালিকদের জানান মো. মাফিকুজ্জামান খান। এরপর ইটভাটার মালিকরা দৌলতপুর কলেজে যান। ওই সময় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভা চলছিল। সভা চলাকালে কলেজের পরিচালনা কমিটির কাছে তারা মৌখিক অভিযোগ দেন।

 

স্বরূপপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক নুরুল ইসলামও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ছাদিকুজ্জামানের কাছে ১৬ লাখ টাকা পাব। টাকার জন্য তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল ধরেন না। টাকা না পেয়ে হয়রানির শিকার হয়ে অবশেষে আজ অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।”

 

ইটভাটার মালিকদের পাওনা টাকা না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকবার ছাদিকুজ্জামানের মোবাইলে কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

আব্দুস সাত্তার নামে অপর ইটভাটার মালিক জানান, “ছাদিকুজ্জামানের কাছে তিনি ইট বিক্রির ৮ লাখ টাকা পাবেন।” শুধু তিনি একাই নন, দৌলতপুরের অন্তত ১১ জন ইটভাটার মালিক ছাদিকুজ্জামানের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন।

 

ইটভাটার মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আলাউদ্দিন বাদল বলেন, “ইটভাটার মালিকরা দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন। এ বিষয়ে তারা অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

 

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “কিছু ইটভাটার মালিক পাওনা টাকার দাবিতে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের বাড়ি ও কলেজে অবস্থান নেন বলে খবর পেয়েছি। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।”


প্রিন্ট