ঢাকা , রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে আদিবাসি পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

রাজশাহীর তানোরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) প্রত্যন্ত পল্লী গুড়ইল আদিবাসী নতুনপাড়া গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার গভীর রাতে ওই আদিবাসী পল্লীতে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল, মিজান ও জুলফরের নেতৃত্বে বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আদিবাসী পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এদিকে শনিবার সকালে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে আদিবাসীরা ভূমিগ্রাসীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নাটের গুরু দুখু হাজিকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

 

এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা রুপেন মুর্মু (৪০), হিরা টুডু (৫৫) ও বেদেনা মুর্মু (৩৮) বলেন, গত শুক্রবার গভীর রাতে গুড়ইল গ্রামের মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল মৃধা, জুলফার ও মিজানের উপস্থিতিতে এবং তাদের সহযোগিতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর উপর বহালা বাড়ী গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর পুত্র শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ভর্তি অস্ত্র সজ্জিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের একটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে তাদের উপর তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা এবং কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানি করে। হুমকি দিয়ে বলা হয়, এরপর জমিতে গেলে তাদের বসতঘর জ্বালিয়ে এলাকায়ছাড়া করা হবে। আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের হামলা ও ভাঙচুর প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে তারা সেখান থেকে চলে এসে দুখু হাজির বাড়িতে অবস্থান নেয়।

 

এদিকে মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি বলেন, তিনি এসব জমির বর্গাচাষীদের দেখভাল করেন মাত্র। তিনি বলেন, আদিবাসিদের কোনো কাগজপত্র নেই এবং তারা জোরপুর্বক জমি দখল করতে গেলে বর্গাচাষিরা বাধা দেন। তিনি দাবি করেন, আদিবাসী পল্লীতে কেউ আগুন দেয়নি, তারা নিজেরাই পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন দেয়ার নাটক করছে। শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বলেন, তিনি যাননি, তার বর্গাদারেরা বাধা দিয়েছেন বলে তিনি শোনেছেন। জমির কাগজপত্র তার রয়েছে, আদিবাসীরা জোর করে তার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

 

জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ৭৯, গুড়ইল মৌজায়, ১৫১ নম্বর খতিয়ানের ৫টি দাগে মোট ১০ একর ৩০ শতক সম্পত্তি রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব সম্পত্তির মালিক মৃত গোপাল ভট্টাচার্যের পুত্র শিবদাস ভট্টাচার্য দিগর। ১৯৭০ সালে তারা স্বপরিবারে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গিয়েছেন। এরপর থেকে এসব জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, দুখু হাজির মদদে শফিকুল ইসলাম ভুলু গং জাল দলিল সৃষ্টি করে এসব সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। তারা বলেন, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগণিত মুহূর্তে আদিবাসী পল্লীতে এমন হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এটা একটি গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই আওয়ামী মতাদর্শী ভূমিগ্রাসীরা এমন জঘন্য কাজ করেছে।

 

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

তানোরে আদিবাসি পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

আপডেট টাইম : ৪ ঘন্টা আগে
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

রাজশাহীর তানোরে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) প্রত্যন্ত পল্লী গুড়ইল আদিবাসী নতুনপাড়া গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার গভীর রাতে ওই আদিবাসী পল্লীতে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল, মিজান ও জুলফরের নেতৃত্বে বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আদিবাসী পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এদিকে শনিবার সকালে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে আদিবাসীরা ভূমিগ্রাসীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নাটের গুরু দুখু হাজিকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

 

এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা রুপেন মুর্মু (৪০), হিরা টুডু (৫৫) ও বেদেনা মুর্মু (৩৮) বলেন, গত শুক্রবার গভীর রাতে গুড়ইল গ্রামের মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি, বাবুল মৃধা, জুলফার ও মিজানের উপস্থিতিতে এবং তাদের সহযোগিতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর উপর বহালা বাড়ী গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর পুত্র শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ভর্তি অস্ত্র সজ্জিত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের একটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে তাদের উপর তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা এবং কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানি করে। হুমকি দিয়ে বলা হয়, এরপর জমিতে গেলে তাদের বসতঘর জ্বালিয়ে এলাকায়ছাড়া করা হবে। আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের হামলা ও ভাঙচুর প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে তারা সেখান থেকে চলে এসে দুখু হাজির বাড়িতে অবস্থান নেয়।

 

এদিকে মোশারফ হোসেন ওরফে দুখু হাজি বলেন, তিনি এসব জমির বর্গাচাষীদের দেখভাল করেন মাত্র। তিনি বলেন, আদিবাসিদের কোনো কাগজপত্র নেই এবং তারা জোরপুর্বক জমি দখল করতে গেলে বর্গাচাষিরা বাধা দেন। তিনি দাবি করেন, আদিবাসী পল্লীতে কেউ আগুন দেয়নি, তারা নিজেরাই পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন দেয়ার নাটক করছে। শফিকুল ইসলাম ওরফে ভুলু বলেন, তিনি যাননি, তার বর্গাদারেরা বাধা দিয়েছেন বলে তিনি শোনেছেন। জমির কাগজপত্র তার রয়েছে, আদিবাসীরা জোর করে তার জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

 

জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ৭৯, গুড়ইল মৌজায়, ১৫১ নম্বর খতিয়ানের ৫টি দাগে মোট ১০ একর ৩০ শতক সম্পত্তি রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব সম্পত্তির মালিক মৃত গোপাল ভট্টাচার্যের পুত্র শিবদাস ভট্টাচার্য দিগর। ১৯৭০ সালে তারা স্বপরিবারে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গিয়েছেন। এরপর থেকে এসব জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, দুখু হাজির মদদে শফিকুল ইসলাম ভুলু গং জাল দলিল সৃষ্টি করে এসব সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। তারা বলেন, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগণিত মুহূর্তে আদিবাসী পল্লীতে এমন হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এটা একটি গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই আওয়ামী মতাদর্শী ভূমিগ্রাসীরা এমন জঘন্য কাজ করেছে।

 

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দারা।

 


প্রিন্ট