আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি, আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান জাতি গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলমান। বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ঘুষমুক্ত একটি ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ গড়েই আমরা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই বাংলাদেশ আপনারা চান? আমার সহকর্মীরা চান? তাহলে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ত্যাগ অনেক করেছি, ইনশাল্লাহ আল্লাহ তৌফিক দিলে জাতির জন্য আরও ত্যাগ স্বীকার করব। আমরা এক মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নেব না। বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সময় আমাদের নেই। এ জীবন অনেক ছোট, কাজ অনেক বড়। ১৮ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সন্তানরা এখনো স্লোগান দিচ্ছেন— “আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।” এই লড়াই চলবে ইনশাল্লাহ। কতক্ষণ? যতক্ষণ না ইনসাফ এই জমিনে কায়েম না হয়। আর ইনসাফ কায়েমের গ্যারান্টি একমাত্র আল কুরআন দিতে পারে, আর কিছুই দিতে পারে না। এই কুরআনের শাসন সকল ধর্মের, সকল দলের, সকল বর্ণের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের গ্যারান্টি। এই কুরআনের শাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে একটা মানবিক বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, দুর্নীতি এবং দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। অন্য ধর্মের ভাইদেরকে আমরা ভাই হিসেবে দেখি। আমরা মানুষকে ঘৃণা করি না, হিংসা করি না। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি। মানুষের দুঃখে কষ্টে চেষ্টা করি সাড়া দেওয়ার, এবং এটাও চেষ্টা করি সবার আগে সাড়া দেওয়ার।
মামলাবাজি-চাঁদাবাজি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ কাজ যারা করেন, বিনয়ের সাথে তাদের অনুরোধ করি, এ কাজ করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। মানবতা অপমানিত হবে, লাঞ্ছিত হবে। ভাই, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কাজ ছেড়ে দিন। অফিস আদালতে যারা ঘুষ বাণিজ্য করেন, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন, তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই, কাজগুলো করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।
সম্মেলনে জামায়াত আমির বলেন, আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান জাতি গঠন করতে চাই। সেই জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। মুমিনরা আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করে না।
শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, শহীদরা আমাদের জাতীয় সম্পদ, পরম সম্মানের পাত্র। যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাদের দলের, সবাই আমাদের দলের মানুষ। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। মাথার ওপরে শ্রদ্ধার সাথে তুলে রাখতে চাই। জোর করে চাপানো গোলামি থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। জাতির ওপর আর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না। এ সময় শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৫ আগস্টের পরে জনগণের ওপর কোনো জুলুম-অত্যাচার হোক, দেশের মানুষ তা বরদাশত করতে রাজি না। যদি জুলুম চলতে থাকে, বাংলাদেশের জনগণ জালেমকে তাড়িয়েছে, নতুনভাবে কোনো জালেম আবির্ভূত হলে তাকেও বিতাড়িত করে ছাড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, সকল দল তাদের মূল কাজ মানুষের প্রতি জুলুম বন্ধ করা। আমরা দুনিয়ার কল্যাণ চাই, আখেরাতের কল্যাণ চাই। আগামীর জাতীয় সংসদ হবে আল কুরআনের সংসদ, এটা আমরা আশা করতে পারি। মানব রচিত মতবাদকে আর প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। আমরা আল্লাহর গোলাম হতে চাই, মানুষের গোলামি করতে চাই না। আগামী দিনে আমরা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের আমলে বাংলাদেশের জনগণ এভাবে সম্মেলন করার সুযোগ পায়নি। বাংলাদেশের জনগণ কথা বলতে পারেনি। পরাজিত সরকার গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিবাদী ঘষেটি বেগম গুলি চালিয়েছে, অলি-গলিতে লাশ পড়েছিল। ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিয়ামতের আগেই তাদের জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে। কোনো জিনিসেরই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। মানুষ হত্যাকারী নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করতে হবে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজ মুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে, দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে, বৈষম্যমুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে। আমিরে জামায়াতের নেতৃত্বে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। সম্মেলন আয়োজনে উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা ১৫ বছর পর রাজশাহীতে জেলা ও মহানগরীর যৌথ আয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৮ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়। নেতাকর্মীদের ঢল নামে মাদরাসা মাঠে। কানায় কানায় পূর্ণ হয় মাঠ। সিপাইপাড়া, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঘোষপাড়া, সিএন্ডবি মোড়, মনিচত্বর ও লক্ষ্মীপুরসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন দলটির রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. কেরামত আলী। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক। সকাল সোয়া ৯টায় জামায়াতের এ কর্মী সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন ৫ আগস্ট রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সাকিব আনজুমের পিতা মাইনুল হক। কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। তিলাওয়াত করেন মাওলানা আরিফুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দানের আগে রাজশাহীর শহীদদের নিয়ে “দাও শক্তি, দাও শক্তি, দাও” গানের চমৎকার পরিবেশন করেন রাজশাহীর প্রত্যয় শিল্পীগোষ্ঠী।
প্রিন্ট