ছোটগল্প
শ্রাবণ মাসের এক সন্ধ্যা। টেকনাফের সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছিলাম। লাল-কমলা আভা মিশে গিয়ে সাগরের জলে এক অদ্ভুত মায়াবী দৃশ্যের সৃষ্টি করেছিল। হঠাৎ, পাশে বসা বৃদ্ধটি কথা বলতে শুরু করলেন। চোখে-মুখে ছিল এক অদ্ভুত দৃষ্টি, যেন অনেক দূর থেকে কিছু দেখে আসছেন।
“তুমি জানো, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায়?” তিনি হঠাৎ করেই প্রশ্ন করলেন।
অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, “শেষ প্রান্ত? সেটা তো কেউ জানে না। পৃথিবী তো গোল!”
বৃদ্ধ হাসলেন। “হ্যাঁ, পৃথিবী গোল। কিন্তু প্রতিটি মানুষের কাছে তার নিজের পৃথিবীর একটি শেষ প্রান্ত আছে। সেটা যেখান থেকে তার কল্পনা আর বাস্তবের সীমানা মিশে যায়।”
আমি চুপ করে গেলাম। বৃদ্ধের চোখে তখন অদ্ভুত এক জ্যোতি। তিনি বলতে লাগলেন, “আমার জীবনের শেষ প্রান্ত হলো এই সাগর পাড়। এখানে বসে আমি আমার জীবনের সব গল্পগুলোকে বিদায় জানাই। সব স্মৃতিরা এখানে এসে মিশে যায়।”
“তাহলে কি এই শেষ প্রান্তেই সব শেষ হয়ে যায়?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
বৃদ্ধ ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন। “না, শেষ বলতে কিছু নেই। শেষ প্রান্তে পৌঁছালে নতুন এক দিগন্ত খোলে। সেখান থেকে শুরু হয় আরেকটি যাত্রা। জীবন হলো এক নিরন্তর প্রবাহ। তুমি যখন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছাবে, তখন বুঝবে, এটাই আরেকটি শুরুর স্থান।”
বৃদ্ধের কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সূর্য তখন ডুবে গিয়েছে, সাগর জলে তখনও শেষ আভার প্রতিচ্ছবি। মনে হলো, এই পৃথিবীর শেষ প্রান্তও যেন এক ধরনের সূর্যাস্ত, যেখানে শেষ হয়ে যায় দিনের আলো, শুরু হয় রাতের যাত্রা।
বৃদ্ধ উঠে দাঁড়ালেন। তার চোখে তখনো সেই মায়াবী দৃষ্টি। “যেখানেই যাও, নিজের পৃথিবীর শেষ প্রান্ত খুঁজে নিও। আর সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন যাত্রার জন্য প্রস্তুত হও।”
তারপর ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিশে গেলেন তিনি। আর আমি বসে রইলাম সাগর পাড়ে, নতুন এক ভাবনায়। পৃথিবীর শেষ প্রান্ত আসলে কোথাও নয়, সেটি মানুষের মনের একটি অবস্থা, যেখানে সবকিছু শেষ হয়ে আবার শুরু হয়…।
শামীম আহমেদ
কবি, লেখক ও সাহিত্যিক
প্রিন্ট