বিধবা হওয়ার প্রায় দেড় যুগ পর ভাতার কার্ড পেয়েছেন ভবানী রানী বসু (৭৫)। তবে ১১ সন্তানের জননী এ বৃদ্ধা বিধবা ভাতা নিতে চান না। তিনি সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কোনো টাকা নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাসালিয়া গ্রামের ভবানী রানী বসু বিধবা হয়েছেন ১৮ বছর আগে। তার স্বামী গৌর গোপাল বসু ছয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ে সন্তান রেখে মারা যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে বিপদে পড়ে যান ভবানী রানী বসু। নিরুপায় হয়ে আর্থিক সাহায্য ও ভাতার একটি কার্ডের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু সে সময় ভবানী রানীর ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতার কার্ড।
২০২০ সালে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের। ওই বছরের জুন মাসে সমাজসেবা কার্যালয় বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয় ভবানী রানী বসুকে। তাতে লেখা আছে ভবানী রানী বসু জুলাই-২০১৯ থেকে বিধবা ভাতা পাবেন। কিন্তু ভবানী রানী বসু ভাতার টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ভাতার একটি টাকাও নেননি।
বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নজরে আসে। ভাতার টাকা নেওয়ার জন্য ভবানী রানী বসুকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘তিনি ভাতার টাকা নেবেন না’। তিনি বলেন, ১৮ বছর আগে যখন আমার স্বামী আমাকে ১১ জন নাবালক সন্তান রেখে মারা যান, তখন আমি সন্তানদের নিয়ে কোনোদিন খেয়ে, কোনোদিন না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে জিবন কাটিয়েছি। এখন আমার সন্তানেরা সকলেই কম-বেশী নিজের পায়ে দাড়িয়েছে। যখন আমার মানুষের তথা সরকারের সাহায্য দরকার ছিলো, তখনই পাইনি; এখন আমি ভাতা দিয়ে কি করবো?
১ নং গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আফসার উদ্দীন শেখ বলেন, আগে এ পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। এখন অবস্থা ভালো। তাই হয়তো ভাতার টাকা নিচ্ছেন না ভবানী রানী বসু। ভবানী রানী বসুর চতুর্থ ছেলে নারু গোপাল বসু বলেন, ‘আমরা ছয় ভাই, পাঁচ ৫ বোন। তিন ভাই ভারতে চলে গেছেন। তারা দেশে আসেন না, এক ভাই মারা গেছেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা দুই ভাই মায়ের দেখাশোনা করি। আমাদের মায়ের ভাতার টাকা লাগবে না।’
প্রিন্ট