ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নল‌ছি‌টি‌তে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পবিপ্রবির উপ-পরিচালক Logo সদরপুরে হেরোইনসহ দুই যুবক আটক Logo রাজশাহীতে ৫ম উপজেলা কাব ক্যাম্পুরী শুভ উদ্বোধন Logo রাত পোহালেই দৌলতপুরে বাচ্চু মোল্লার নেতৃত্বে বিএনপি কর্মীসভা Logo সদরপুরে জাসাসের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত Logo দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই, সাংবিধানিকভাবে সবার অধিকার সমানঃ জামায়াতে আমীর Logo লালপুরে পদ্মার চরে কৃষির নতুন সম্ভাবনা, স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা Logo রাষ্ট্র বিনির্মাণে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo ভূরুঙ্গামারী রিপোর্টার্স ইউনিটির নতুন কমিটি গঠন Logo তানোরে বিএমডিএর সিদ্ধান্ত মানছে না পল্লী বিদ্যুৎ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

লালপুরে পদ্মার চরে কৃষির নতুন সম্ভাবনা, স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে কৃষির বিপ্লব শুরু হয়েছে। কৃষকরা এখন নতুন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছেন। এই অঞ্চলের চাষিদের জন্য এটি নতুন শস্য ভান্ডারের দ্বার উন্মোচন হতে পারে। বর্ষার সময়ে পদ্মা নদী তার উচ্ছল স্রোতে বহু পলিমাটি জমা করে, যা পরে উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়। হেমন্তকাল থেকে শুরু হয় কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। শীতের শুরুতেই পদ্মার চরের চিত্র হয়ে ওঠে সবুজ শস্যক্ষেত্র, যা বর্তমানে লালপুরের পরিচিত দৃশ্য।

 

বিগত কিছু বছর ধরে শীতকালে লালপুরের পদ্মার চরে এমন দৃশ্য সাধারণ হয়ে উঠেছে। তবে এ বছর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে কৃষকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি কাজ করছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, লালপুরের প্রায় ১৮টি চরে ৩,৬৯২ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে নানা ধরনের ফসল। এখানে সবজি, দানাদার শস্য, ডাল, মসলা, এবং অর্থকরী ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে। এবছর, পদ্মা নদীর চরে সবজি এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার প্রলয়ঙ্করী পদ্মা নদী এখন শান্ত, এবং নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে নতুন পলিমাটি। চারিদিকে ফসলের ক্ষেত আর সবুজের সমারোহ। চাষ হচ্ছে রসুন, পেঁয়াজ, বেগুন, গাজর, মিষ্টি আলু, মুলা, কপি, চালকুমড়া, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, আখ, চীনাবাদাম, মালটা, পেয়ারা সহ প্রায় ২০ ধরনের ফসল। এসব ফসল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে।

 

এদিকে, কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন আরো বড় কৃষির সম্ভাবনার দিকে। রহিমপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর আলী বলেন, “চরে ফসল উৎপাদনের জন্য একটি ছোট্ট চালা করেছি। একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। গাছে বেগুন ধরতে শুরু করেছে। আশা করছি বেগুন বিক্রি করে ভালো লাভ হবে।” তবে, তিনি আরও জানান, উর্বর চরে স্বাচ্ছন্দ্যে ফসল ফলাতে সরকারী প্রণোদনার পাশাপাশি জামানতহীন ও সুদহীন শস্য ঋণের প্রয়োজন।

 

কৃষক মুনতাজ আলী জানান, ডিজেল, সার, এবং বীজের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে, তাই কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। আর কৃষক মুস্তাক বলেন, “এছবছর হঠাৎ বন্যায় মুলার ক্ষেত তলিয়ে গিয়েছিল। তবে এবার ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করি এবার ভালো ফলন পাবো।”

 

বিলমাড়ীয়া পদ্মার চরে কৃষক রাউফ মালিথা জানান, “আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি, ভালো ফলন ও দামের আশায়। তবে এবছর পেঁয়াজ বীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, ফলে লাভের আশা কম।”

 

এদিকে, লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, “বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা আবার নতুন করে চরে সবজি চাষ শুরু করেছেন। তাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”

 

এছাড়া, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, “পদ্মার চরে প্রায় ১০০টি বাথান রয়েছে, যেখানে ৩০০ খামারি দশ হাজার মহিষ ও পনেরো হাজার গরু পালন করছেন। এর মাধ্যমে বছরে ১২০০ টন দুধ এবং ২০০০ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নল‌ছি‌টি‌তে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পবিপ্রবির উপ-পরিচালক

error: Content is protected !!

লালপুরে পদ্মার চরে কৃষির নতুন সম্ভাবনা, স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা

আপডেট টাইম : ২০ ঘন্টা আগে
রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে কৃষির বিপ্লব শুরু হয়েছে। কৃষকরা এখন নতুন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছেন। এই অঞ্চলের চাষিদের জন্য এটি নতুন শস্য ভান্ডারের দ্বার উন্মোচন হতে পারে। বর্ষার সময়ে পদ্মা নদী তার উচ্ছল স্রোতে বহু পলিমাটি জমা করে, যা পরে উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়। হেমন্তকাল থেকে শুরু হয় কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। শীতের শুরুতেই পদ্মার চরের চিত্র হয়ে ওঠে সবুজ শস্যক্ষেত্র, যা বর্তমানে লালপুরের পরিচিত দৃশ্য।

 

বিগত কিছু বছর ধরে শীতকালে লালপুরের পদ্মার চরে এমন দৃশ্য সাধারণ হয়ে উঠেছে। তবে এ বছর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে কৃষকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি কাজ করছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, লালপুরের প্রায় ১৮টি চরে ৩,৬৯২ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে নানা ধরনের ফসল। এখানে সবজি, দানাদার শস্য, ডাল, মসলা, এবং অর্থকরী ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে। এবছর, পদ্মা নদীর চরে সবজি এবং অন্যান্য ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার প্রলয়ঙ্করী পদ্মা নদী এখন শান্ত, এবং নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে নতুন পলিমাটি। চারিদিকে ফসলের ক্ষেত আর সবুজের সমারোহ। চাষ হচ্ছে রসুন, পেঁয়াজ, বেগুন, গাজর, মিষ্টি আলু, মুলা, কপি, চালকুমড়া, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, আখ, চীনাবাদাম, মালটা, পেয়ারা সহ প্রায় ২০ ধরনের ফসল। এসব ফসল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে।

 

এদিকে, কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন আরো বড় কৃষির সম্ভাবনার দিকে। রহিমপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর আলী বলেন, “চরে ফসল উৎপাদনের জন্য একটি ছোট্ট চালা করেছি। একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। গাছে বেগুন ধরতে শুরু করেছে। আশা করছি বেগুন বিক্রি করে ভালো লাভ হবে।” তবে, তিনি আরও জানান, উর্বর চরে স্বাচ্ছন্দ্যে ফসল ফলাতে সরকারী প্রণোদনার পাশাপাশি জামানতহীন ও সুদহীন শস্য ঋণের প্রয়োজন।

 

কৃষক মুনতাজ আলী জানান, ডিজেল, সার, এবং বীজের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে, তাই কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। আর কৃষক মুস্তাক বলেন, “এছবছর হঠাৎ বন্যায় মুলার ক্ষেত তলিয়ে গিয়েছিল। তবে এবার ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করি এবার ভালো ফলন পাবো।”

 

বিলমাড়ীয়া পদ্মার চরে কৃষক রাউফ মালিথা জানান, “আমি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি, ভালো ফলন ও দামের আশায়। তবে এবছর পেঁয়াজ বীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, ফলে লাভের আশা কম।”

 

এদিকে, লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, “বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা আবার নতুন করে চরে সবজি চাষ শুরু করেছেন। তাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”

 

এছাড়া, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, “পদ্মার চরে প্রায় ১০০টি বাথান রয়েছে, যেখানে ৩০০ খামারি দশ হাজার মহিষ ও পনেরো হাজার গরু পালন করছেন। এর মাধ্যমে বছরে ১২০০ টন দুধ এবং ২০০০ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”


প্রিন্ট