মোঃ আব্দুল জব্বার ফারুক, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি আত্রাইয়ের মুক্তিকামী হাজারো বাঙালি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তারা প্রাণ দিয়েছে অকাতরে। তবে, যারা ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্মৃতিরূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৬টি বধ্যভূমি আজও অবহেলিত এবং অরক্ষিত।
আত্রাই, নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। আত্রাই পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়, এই স্টেশনটি ছিল পাক সেনাদের নির্যাতন ক্যাম্প। এখানে অসংখ্য বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। তারা বহু নিরীহ বাঙালি যুবতীকে ধর্ষণের পর হত্যা করত। এই বধ্যভূমির স্মৃতি আজও লুকিয়ে থাকা গর্ভমুক্তি সংগ্রামীদের দুঃসহ কষ্টের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে, এই বধ্যভূমি এখন অরক্ষিত এবং অবহেলিত হয়ে পড়েছে।
সিংসারা বধ্যভূমি:
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ভোর রাতে আত্রাই থানার সিংসারা গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালায়। তারা নিরীহ ২৯ জন বাঙালিকে রাইফেল দিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। আজও এখানে ২৯ জন শহীদদের স্মৃতি ফলক রয়েছে, যা ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান উদ্বোধন করেন।
হাটকালুপারা বধ্যভূমি:
১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই, আত্রাই থানার হাটকালুপারা গ্রামে পাক সেনারা হামলা চালিয়ে ১৭ জন নিরীহ হিন্দু বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বান্দাইখারা বধ্যভূমি:
১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই প্রথম হামলা চালিয়ে বান্দাইখারা গ্রামে ৮ জনকে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় হামলা হয় ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, যখন পাক সেনারা হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে ৩১ জনকে হত্যা করে।
তারাটিয়া বধ্যভূমি:
তারাটিয়া গ্রামে নৌকা দিয়ে আসা পাক সেনারা পুরো গ্রাম ঘেরাও করে ১২ জনকে হত্যা করে।
মিরাপুর বধ্যভূমি:
১৯৭১ সালের ১০ জুলাই আত্রাইয়ের মিরাপুর ও রাণীনগরের কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ বধ্যভূমি আজও চিহ্নিত কিংবা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বধ্যভূমি গুলোর বিষয়ে আঞ্চলিক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, তার অসুস্থতার কারণে আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুনঃ তানোরে কুড়ি পয়েন্টে অবৈধ মাটি বাণিজ্য
এই বধ্যভূমিগুলোর সংরক্ষণ ও স্মৃতি স্মরণ জরুরি, যাতে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য সেসব শহীদদের ত্যাগ ও অবদান সম্পর্কে জানাতে পারে।
প্রিন্ট