রাজশাহীর তানোরের কলমা ও তালন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় কুড়ি পয়েন্টে অবৈধ মাটি বাণিজ্য চলছে, যার কারণে সরকারি পাকা ও কাঁচা রাস্তা নষ্ট এবং পরিবেশ দুষণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে এই অবৈধ মাটি বাণিজ্য চালানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাক্টরে কাদামাটি পরিবহণ করায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটিবাহী গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ পথচারিরা, এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অবাধে মাটি কাটার ফলে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে এবং পরিবেশের ভারসাম্যও বিনষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির এক্সকেভেটর (ভেকু) ব্যবসায়ীরা চুক্তিভিত্তিকভাবে কৃষি জমি গিলে খাচ্ছে। এর ফলে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
কৃষি ও পরিবেশবিদরা বলেন, অবাধে পুকুর খননের ফলে উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে, একই সঙ্গে খাল-বিলের প্রাণিকুলও বিপন্ন হচ্ছে। উপজেলার কলমা ইউপির বংশীধরপুর, কুসুমপুকুর, নয়টিপাড়া, বাউরী গ্রাম, বহড়া, শংকরপুর, মালবান্ধা, তানোর পৌর এলাকার কালীগঞ্জহাট, দাড়দহ, জুড়ানপুর, তালন্দ ইউপির মোহর এবং সরনজাই ও পাঁচন্দর ইউপির বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভেকু দালালরা, যেমন রাকিবুল ও রাশেদুল, জানান, তারা সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি কাটার কাজ করছেন এবং এ বিষয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করলে কোনো লাভ হবে না। তারা আরও জানান, বিএনপি নেতা সহীদুল ইসলামের মাধ্যমে ম্যানেজ পক্রিয়া করা হয়েছে।
এদিকে, খোলা ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরে কৃষি জমির মাটি এনে বিভিন্ন জায়গায় ভরাট করা হচ্ছে, যা পাকা সড়কে কাদামাটি পড়ে রাস্তাটি নষ্ট করছে। সেই কাদামাটি সরানোর কাজে শ্রমিকদের নিয়োজিত রেখেছেন ভেকু ব্যবসায়ীরা, ফলে কোদাল দিয়ে মাটি সরাতে গিয়ে পাকা সড়কের পাথর এবং উপরের বিটুমিনও উঠে যাচ্ছে।
উপজেলার বংশীধরপুর এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন ও আফসার আলী জানান, ভেকুর বিকট শব্দ এবং ধুলাবালিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, বিষয়টি কলমা ইউপির বিট অফিসার এসআই রুহুল সাহেবকে জানানো হলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার তিনি এসে ভেকু দালালের সঙ্গে কথা বললেও মাটিকাটা বন্ধ হয়নি।
আরও পড়ুনঃ মাগুরার শত্রুজিৎপুরে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে দলবদ্ধ হয়ে হুমকি ও চাঁদা দাবির অভিযোগ
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, রাস্তার বিটুমিনের শত্রু হচ্ছে কাদামাটি, এবং নিয়ম না মেনে মাটি পরিবহন করায় রাস্তায় কাদামাটি পড়ে রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মুঠোফোনে কল করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তিনি কল গ্রহণ করেননি।
প্রিন্ট