ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo রাজশাহীর মোহনপুর বিএনপি’র সম্মেলন সভাপতি মুন, সম্পাদক মাহাবুর Logo বিভাগের দাবিতে উত্তাল নোয়াখালী Logo তানোরে নীতিমালা লঙ্ঘন করে গভীর নলকুপ অপারেটরের আবেদন Logo মাধবদীতে হুমায়ুন কবির নামে এক জনকে গুলি করে হত্যা Logo প্রত্যেকটা বাড়িতে গিয়ে তারেক জিয়ার ৩১ দফার দাওয়াত পৌছে দিতে হবে Logo মাত্র একটি কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন হেলাল হাফিজ Logo পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের সৌজন্য সাক্ষাৎ Logo কালুখালী কলেজ প্রভাষক রাজ্জাকের জানাজা সম্পন্ন Logo খোকসায় প্রগতি সংঘের উদ্যোগে দরিদ্র তাঁতিদের মাঝে বিনামূল্যে তাঁত শিল্প উপকরন বিতরণ Logo মালাই চা বিক্রি করে শামীম সাবলম্বী
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

লালপুরে প্রকল্পের অর্থ লোপাট, গরীবের নলকূপ বিত্তবানদের বাড়িতে

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে দরিদ্রদের বিনামূল্যে নলকূপ বিতরণে অনিয়ম করে প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও ঘুষ বাণিজ্য করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

লালপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণতম ও কম বৃষ্টিপাতের উপজেলা হওয়ায় এখানে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় গত ৩ বছরে সরকার হতদরিদ্রদের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার প্রকল্প প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এ প্রকল্পের টাকা লোপাটের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অধীনে ২০২২ – ২০২৪ অর্থ বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে হস্তচালিত নলকূপ, গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বিতরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবে হতদরিদ্রদের মাঝে এসব নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বিতরণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সচ্ছল ও বিত্তবানদের মাঝে এসব নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

এছাড়া ২০২২ – ২০২৩ অর্থ বছরে দুটি প্রকল্পে অর্থ লুটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অসচ্ছল পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে হস্তচালিত নলকূপ বিতরণের জন্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মনি ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাবনী সুলতানাকে সভাপতি করে আলাদা দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে ঘুষ গহণ ও কাজ সম্পূর্ণ না করেই কাগজে কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

 

উপজেলার মাঝগ্রামের রেজাউল করিম ও মোহরকয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের নামে কাগজে কলমে গভীর নলকূপের বরাদ্দ দেওয়া হলেও সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কোন নলকূপ দেওয়া হয়নি। উপজেলার নেঙ্গপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান ও মহেশপুর গ্রামের চম্পা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তারা বিত্তবান হলেও ২০২৩ – ২০২৪ অর্থ বছরে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত সাবমার্সিবল পাম্প পেয়েছেন। টাকার বিনিময়ে এসব পাম্প পেলেও তাদের এখনো পানির টাংকি দেওয়া হয়নি, পাকাকরণও করা হয়নি। পাটিকাবাড়ি গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, তিনি অর্জুনপুর – বরমহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল সাত্তারকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি সাবমারসিবল পাম্প পেয়েছেন।

 

প্রকল্পের সার্বিক পর্যালোচনা শেষে দেখা যায়, নিয়ম নীতির উপেক্ষা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সুবিধাভোগী গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রকল্প অসম্পূর্ণ রেখেই প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাবনী সুলতানা বলেন, “প্রকল্প চলাকালীন সময়ে আমি ছুটি নিয়ে চোখের সার্জারী করার জন্য ভারতের চেন্নাইতে ছিলাম। প্রকল্পের কাজ পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মনি করেছিল। আমি কিছুই জানি না। আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছিলো কিন্তু আমি এবিষয়ে অবগত ছিলাম না।”

 

মনোয়ার হোসেন মনিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, “আমরা ছিলাম বলির পাঠা। আমাদের থেকে জোর করে প্রকল্পগুলো সাবেক এমপি বকুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে নিয়ে নিয়েছিল। আমাদের মাধ্যমে কিছুই দেওয়া হয় নি।” এ বিষয়ে নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

 

উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম বলেন, “আমি জুলাই মাসে এখানে যোগদান করেছি। তার আগে কি হয়েছে সেটা উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন।” এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীর মোহনপুর বিএনপি’র সম্মেলন সভাপতি মুন, সম্পাদক মাহাবুর

error: Content is protected !!

লালপুরে প্রকল্পের অর্থ লোপাট, গরীবের নলকূপ বিত্তবানদের বাড়িতে

আপডেট টাইম : ০৬:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে দরিদ্রদের বিনামূল্যে নলকূপ বিতরণে অনিয়ম করে প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও ঘুষ বাণিজ্য করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

লালপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণতম ও কম বৃষ্টিপাতের উপজেলা হওয়ায় এখানে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় গত ৩ বছরে সরকার হতদরিদ্রদের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার প্রকল্প প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এ প্রকল্পের টাকা লোপাটের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অধীনে ২০২২ – ২০২৪ অর্থ বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে হস্তচালিত নলকূপ, গভীর নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বিতরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবে হতদরিদ্রদের মাঝে এসব নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বিতরণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সচ্ছল ও বিত্তবানদের মাঝে এসব নলকূপ ও সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

এছাড়া ২০২২ – ২০২৩ অর্থ বছরে দুটি প্রকল্পে অর্থ লুটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অসচ্ছল পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে হস্তচালিত নলকূপ বিতরণের জন্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মনি ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাবনী সুলতানাকে সভাপতি করে আলাদা দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে ঘুষ গহণ ও কাজ সম্পূর্ণ না করেই কাগজে কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

 

উপজেলার মাঝগ্রামের রেজাউল করিম ও মোহরকয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের নামে কাগজে কলমে গভীর নলকূপের বরাদ্দ দেওয়া হলেও সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কোন নলকূপ দেওয়া হয়নি। উপজেলার নেঙ্গপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান ও মহেশপুর গ্রামের চম্পা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তারা বিত্তবান হলেও ২০২৩ – ২০২৪ অর্থ বছরে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত সাবমার্সিবল পাম্প পেয়েছেন। টাকার বিনিময়ে এসব পাম্প পেলেও তাদের এখনো পানির টাংকি দেওয়া হয়নি, পাকাকরণও করা হয়নি। পাটিকাবাড়ি গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, তিনি অর্জুনপুর – বরমহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল সাত্তারকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি সাবমারসিবল পাম্প পেয়েছেন।

 

প্রকল্পের সার্বিক পর্যালোচনা শেষে দেখা যায়, নিয়ম নীতির উপেক্ষা করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সুবিধাভোগী গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রকল্প অসম্পূর্ণ রেখেই প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাবনী সুলতানা বলেন, “প্রকল্প চলাকালীন সময়ে আমি ছুটি নিয়ে চোখের সার্জারী করার জন্য ভারতের চেন্নাইতে ছিলাম। প্রকল্পের কাজ পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মনি করেছিল। আমি কিছুই জানি না। আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছিলো কিন্তু আমি এবিষয়ে অবগত ছিলাম না।”

 

মনোয়ার হোসেন মনিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সময়ের প্রত্যাশাকে জানান, “আমরা ছিলাম বলির পাঠা। আমাদের থেকে জোর করে প্রকল্পগুলো সাবেক এমপি বকুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে নিয়ে নিয়েছিল। আমাদের মাধ্যমে কিছুই দেওয়া হয় নি।” এ বিষয়ে নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

 

উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম বলেন, “আমি জুলাই মাসে এখানে যোগদান করেছি। তার আগে কি হয়েছে সেটা উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন।” এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট