রনি আহমেদ রাজু, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি
মাগুরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মো: নূর ইসলাম ভি এস লেবার ম্যাশন সরকারি রাজমিস্ত্রীর জোগালে এবং ক্যাশিয়ার ইমামুল হকের অনিয়ম দুর্নীতি ফাঁস। অনুসন্ধানে গিয়ে পাওয়া যায় সরাসরি সরকারি রাজমিস্ত্রীর জোগালে ম্যাশন নুর ইসলামের পাচারকৃত মালামাল গুলো হাতে নাতে ধরে ফেলেছে। এসময় ইমরুল হক বলেন, এই মালামাল ভাই ভাই মেশিনারিজের দোকানদার নায়েবের। সেখানে রুমের দেওয়ালে ফ্রেন্ডস কন্সট্রাকশন ফার্ম (এফসিএফ) এর সাইনবোর্ড দেখা যায়, আর রুমের মধ্যে লিরা কোম্পানির পাইপ ও বেশ কয়েকটি গাজী কোম্পানির সাবমারসিবল পানির পাম্প পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাগুরা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ম্যাশন পদের নুর ইসলাম এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার ইমামুল হক সরকারি চাকরি করে ঠিকাদারের কাজ করে থাকে ও কাজ পাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
ম্যাসন নুর ইসলাম সরকারি রাজমিস্ত্রির জোগালে পদে চাকরি করে ব্যবসা করে নিজেকে বাইরে বড় পদের পরিচয় দেয় ম্যাকানিক বলে। ৭ লাখ টাকা দিয়ে দুই গ্রুপ ১৫ টি ওয়াশ ব্লক ক্রয় করে এক ঠিকাদার ব্যক্তির কাছ হতে এবং তার পূর্বের কাজের মানো নিম্নমানের। তার গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের জুকা গ্রামে,তিনি গ্রামের বাড়িতে ১ কোটি টাকার অধিক মূল্য দিয়ে বাড়ি করেছে। যে কাজগুলো যারা অরজিনাল মাগুরা পাবলিক হেলথের জনস্বাস্থ্যের ঠিকাদার, এরা বেশির ভাগ কাজ থেকে বঞ্চিত এবং বাইরের ঠিকাদার সিংহ ভাগ কাজ পায়।
বাইরের ঠিকাদাররা হলো ২৫০০ হাজার কনস্ট্রাকশন কুষ্টিয়া, বরগুনার কামাল, চুয়াডাঙ্গার ইলিয়াস, গোপালগঞ্জের কামাল সাহেব, রাজবাড়ীর ঠিকাদার গণ, কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলার ঠিকাদার। কাজ কর্মগুলো উঠিয়ে দেয় ম্যাশন নুর ইসলাম এবং ক্যাশিয়ার ইমামুল হক। ম্যাশন নুর ইসলামের সাথে কাজ করে মিস্ত্রী কাশিনাথপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম। আর অপরদিকে মাগুরার হেলথ এর ঠিকাদার হাতেগোনা কয়েকজন তারা হলো খবির আহমেদ, পাল্লার আনু, মিরুল ইসলাম ও সেলিম এরা ঠিকমত ঠিকাদার কাজ পাই না। অনুসন্ধানে এবিষয়ে গত একসপ্তাহ পূর্বে ম্যাসন নুর ইসলামের কাছে ১৫ টি ওয়াশ ব্লক কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে মোবাইল ফোন রিসিভ করেন না। সে জানাই তার ছেলে ব্যবসা করে সে কিছু জানে না।
এ বিষয়ে দৈনিক সময়ের প্রত্যাশার জেলা প্রতিনিধি মাগুরা জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক তার কাছে শোনা হলে তিনি জানান, বাইরের জেলার ৬৪ জেলার ওটিএম টেন্ডারে ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর এলটিএম হলে নিজের জেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। বেশিরভাগ জনস্বার্থে ৯০% পারসেন্ট কাজ ওটিএম ৬৪ জেলার ১ ভাগ পাবে মাগুরা জেলার ঠিকাদার। এলটিএম টেন্ডার ভাগ নিতে হলে ডিপার্টমেন্ট লাইসেন্স লাগবে এবং ওটিএম টেন্ডার নিতে হলে জেনারেল লাইসেন্স লাগবে। তার কাছে ম্যাসন নুর ইসলাম কিভাবে সরকারি চাকরি করেও সে ওয়াশ ব্লক ক্রয় করে ঠিকাদারি করছে, এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি চাকরি করে ঠিকাদারী করা যায় না এই বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নাই।
ক্যাশিয়ার ইমামুল হক গোপনে ঠিকাদারদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ পাওয়ানোর কথা শুনালে তিনি বলেন এটা আমার জানা নাই। তার কাছে ১৫ টি ওয়াশ ব্লকের সদরের কাজের তথ্য চাওয়া হলে তিনি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তথ্য ফোরাম এর মাধ্যমে আবেদন করতে বলেন, এছাড়া তিনি কোন তথ্য ও ভিডিও বক্তব্য দিবেন না এবং শেষে বলেন সাংবাদিকের কাছে বক্তব্য দিতে হলে আমার উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সাংবাদিক যখন বলেন আপনার ঊর্ধ্বতনের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে দিচ্ছি, আমাদের একটু বক্তব্য দেন, তখন তিনি বলেন বাইরে প্রোগ্রাম ও মিটিং আছে এর কথা বলে দ্রুত বের হয়ে যান। মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত রয়েছে অনুসন্ধানী দের মতে। আওয়ামী ঠিকাদারের একক আধিপত্যে চলে আসছে মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন সরকারি কাজে।
আওয়ামী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সেই কাজ, সরকারি চাকরিজীবীর কাছে সাব-কন্ট্রাক্টে ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে জেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের ক্যাশিয়ার মো: ইমামুল এর বিরুদ্ধে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আলোচিত এই ক্যাশিয়ার মো. ইমামুল। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুল রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মাগুরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইজিপি টেন্ডারের নামে ঠিকাদার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার মূলে যে সকল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার সব কটিতেই সম্পৃক্ত।
১৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিস থেকে জানা যায়, ইমামুলকে নাইটগার্ড থেকে বর্তমান ক্যাশিয়ার পদে পদোন্নতি দেয়ার পেছনে রয়েছে বিরাট ভূমিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। তিনি কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূত সকল প্রকার ফাইলের কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন রাতে অফিসের মূল ফটকের গেট বন্ধ করে দ্বিতীয় তলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাশের রুমে গভীর রাত পর্যন্ত ঠিকাদার দের সাথে আন-অফিসিয়ালি কাজকর্ম এবং বিভিন্ন কাজের পার্সেন্টেজ ভাগ-বটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। ইমামুলের সাবেক কর্মস্থল যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে) জানা যায়, ইজিপি টেন্ডারবাজ ইমামুলের অতীত। নড়াইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল থেকে জানা যায়, ইমামুল এর অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় নড়াইল থাকাকালীন নিউজ প্রকাশিত হয় এবং তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দফারফা করে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো: সাইফুর রহমান বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন ইমামুল। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও প্রধান প্রকৌশলী সাথে রয়েছে বিশাল সুসম্পর্ক। মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় নিরাপদ পানি ও সেনটেশন প্রকল্প,(যার চুক্তি মূল ০১ কোটি টাকার অধিক)। সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্যানিটেশন সরবরাহ প্রকল্প (PEDP-4) সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ একই আওয়ামী ঠিকাদারদের পাইয়ে দেন তিনি। মাগুরা পৌরসভার পানি শোধনাগার নির্মাণেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সাব-কন্টাকে সরকারি কর্মচারীদের কাজ করা,পরিচয় গোপন করে সরকারি চাকুরিতে ভয়ংকর জালিয়াতি,বারবার একই আওয়ামী ঠিকাদার কাজ পাওয়া, নিম্ন মানের অল্প কাজে অধিক বিল উত্তোলন এবং কর্মচারীদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, ভুয়া বিল-ভাউচার উত্তোলন, সরকারি চাকরিতে ডিসিপ্লিন ভঙ্গ, প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি নন ক্যাশিয়ার ইমামুল। চলমান অনিয়ম দুর্নীতি এবং নাইটগার্ড থেকে বর্তমান ক্যাশিয়ার পদে পদোন্নতি বিষয় জানতে,মাগুরা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো: বক্কর সিদ্দিক, তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয় তিনি গণমাধ্যম কর্মীকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পর বিল পরিশোধ হলে তথ্য দেবেন বলে তিনি জানান।
প্রিন্ট