ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল জাপোরিঝঝিয়ায় রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল ইউক্রেন সেনারা। আশা ছিল, ‘দখলদার’ রুশ সেনাদের হটাতে পারবেন তারা। কিন্তু ইউক্রেন সেনারা সামান্য বা বলতে গেলে কোনো সাফল্যই পাননি। এতে করে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়ে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর-গ্রামে এখনও রোজ রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চলছে, আর অব্যাহত রুশ হামলার শিকার হচ্ছেন ইউক্রেন সেনারা।
এদিকে নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তবে তিনি জিতলেও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জেতেন, সেক্ষেত্রে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা এখনকার তুলনায় কমে যেতে পারে। এ মুহূর্তে দেশটিতে এ সহায়তার পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের বেশি।
কমলা বা ট্রাম্প, যেই যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, ইউক্রেন সীমান্তে এমনকি দেশটিতে বসবাসরত প্রত্যেকের ওপর এই নির্বাচনের ফল গভীর প্রভাব পড়বে।
উদাহরণ হিসেবে, যদি তারা (কমলা বা ট্রাম্প) ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে ও ফ্রন্টলাইন থেকে সরে যেতে বলেন, সে ক্ষেত্রে জাপোরিঝঝিয়ার মতো অঞ্চলগুলো হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যায় ভাগ হয়ে পড়তে পারে। যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে ১৯৫০–এর দশকে দুই কোরিয়া ও তাদের মিত্রদের লড়াই থামলেও এখনো কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেনি।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত মেটাতে ‘কিছু একটা বের করবেন’। যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় যে বিকল্প গ্রহণ করা হতে পারে সেটি হলো, ইউক্রেনের ওপর থেকে সমর্থন পুরোপুরি প্রত্যাহার। ফলাফল হিসেবে, রুশ বাহিনী ক্রমেই তাদের কাঙ্ক্ষিত এলাকাগুলো, এমনকি একসময় গোটা ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে।
ইউক্রেনবাসী নিশ্চিতভাবে কমলাকেই তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেনের সাংবাদিকেরাও তার বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার অপতথ্য’ মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবশ্য ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্রমেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তারা চান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অনতিবিলম্বে অবসান। এ যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের জেতা সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে ধারণা তাদের।
ইউক্রেনের সামনে তৃতীয় একটি দৃশ্যও ধরা দিতে পারে। তা হলো, রাশিয়ার দখল করা সব এলাকা পুনরুদ্ধার। তবে দৃশ্যত এটি কখনোই ঘটবে না।
আন্দ্রিয়া একজন ইউক্রেন সেনা। সম্মুখসমরে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত সাঁজোয়া যানের বহরের একটি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনি। আন্দ্রিয়া বলছিলেন, ‘যদি সহায়তা (যুক্তরাষ্ট্রের) বন্ধ হয় বা কমে, তবে আমাদের সেনাদের কাঁধে বোঝা এসে পড়বে। আমাদের কাছে যা আছে, আমরা তা নিয়েই লড়ব। কিন্তু সবাই জানে, এটা (রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই) ইউক্রেনের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’
স্বাভাবিকভাবেই আন্দ্রিয়া ও তার সহকর্মী সেনারা ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা এরই মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমিয়ে দিচ্ছে এবং আরও সামরিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা হতাশাজনক করে তুলছে।
যদি সহায়তা (যুক্তরাষ্ট্রের) বন্ধ হয় বা কমে, তবে আমাদের সেনাদের কাঁধে বোঝা এসে পড়বে। আমাদের কাছে যা আছে, আমরা তা নিয়েই লড়ব। কিন্তু সবাই জানে, এটা (রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই) ইউক্রেনের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনবাসী নিশ্চিতভাবে কমলাকেই তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেনের সাংবাদিকেরাও তার বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার অপতথ্য’ মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবশ্য ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্রমেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তারা চান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অনতিবিলম্বে অবসান। এ যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের জেতা সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে ধারণা তাদের।
সূত্র: বিবিসি।
প্রিন্ট