এখন থেকে দশ পনেরো বছর আগেও পাবনার চাটমোহরের বিভিন্ন গ্রামে তাঁত শিল্প ছিল জম জমাট। ভোড় বেলা শ্রমিকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠতো তাঁতীদের তাঁত ঘর গুলো। সেই তাঁত ঘর গুলোর অধিকাংশই এখন আর নেই। হাতে গোনা যে কয়টি তাঁত ঘর আছে সে গুলোতেও এখন বিরাজ করে নিরবতা। সরেজমিন হরিপুর ইউনিয়ন সদরের সন্নিকটে অবস্থিত হরিপুর তাঁতিপাড়ায় গেলে চোখে পরে মাকড়শার জাল আটকে রয়েছে ভাঙ্গাচোড়া তাঁত গুলোর সাথেদেখেই বোঝা যায় অনেক দিন কোন শ্রমিক বসে নি এতে।
পূর্বে হরিপুর তাঁতি পাড়ার প্রায় ২৫ পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমান দুইটি পরিবার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। অন্যান্য গ্রামে আর আর কাপড় তৈরী হয় না।
এক সময় চাটমোহরের হরিপুর তাঁতিপাড়া, চরসেনগ্রাম, গৌড়নগর, বিন্যাবাড়ি, কুয়াবাসী, চড়ইকোল সহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এ এলাকায় তৈরী শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ওড়না এলাকার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি হতো।
হরিপুর তাঁতিপাড়ার তাঁত মালিক হাবিবুর রহমান জানান, “আমার বিশটি তাঁত রয়েছে, এর মধ্যে আঠারোটিই বন্ধ। আগে শ্রমিকেরা কাজ করতো, আমি দেখাশুনা করতাম। এখন আমি নিজেই শ্রমিকের কাজ করি। ঢাকার শোরুম মালিকরা অর্ডার দিলে শাড়ি ও ওড়না তৈরী করে পাঠিয়ে দেই। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাজার থেকে সূতা কিনি।
প্রতিটি শাড়ি সাড়ে পাচশত টাকা থেকে ছয়’শ টাকায় এবং ওড়না ১৫০ টাকা করে বিক্রি করি। শোরুম মালিকরা শাড়ি, ওড়নার উপর কাজ করে বেশি দামে বিক্রি করে। একজন সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ টি শাড়ি তৈরী করতে পারি। প্রতিটি শাড়িতে ২৭০ টাকার সূতা প্রয়োজন হয়।
শ্রমিকের মজুরী বাবদ ১৫০ টাকা এবং লাভ বাবদ ১২০ টাকা পাই। এ হিসেবে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পাচ্ছি। পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে দিনাতিপাত করছি। আমার বাবাও এ পেশায় জড়িত
ছিলেন। আমরা সাত ভাই তাঁতের কাজ করতাম এখন কেবল আমিই করি।ব্যবসার মন্দা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এক দিকে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি ঢাকার অর্ডার কমে যাওয়ায় এ এলাকার তাঁত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
তাঁত শ্রমিক হাসাদুল ইসলাম , নজরুল ইসলাম ও মনিরুল জানান, এক দিনে আমরা একটি শাড়ি তৈরী করতে পারি। একটি শাড়ির মজুরী বাবদ কারুকার্য অনুযায়ী আমরা ১৪০ থেকে ২২০ টাকা পাই। এ টাকায় কোন মতে জীবন যাপন করছি। অন্য কাজ করতে পারি না বিধায় এ কাজটিই করছি। কখনো বিপদে আপদে পরলে বেসরকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হয়। সে কিস্তি পরিশোধ করতে হয় পাশাপাশি সংসার ও চালাতে হয়। অনেক সময় কাজ থাকে না। তখন আরো বেশি বিপদে পরি আমরা।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মকবুল হোসেন জানান, একসময় হরিপুর তাঁতি পাড়াসহ চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁতিরা এ কাজের কাজ সম্পৃক্ত ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে
এখন চাটমোহরের তাঁত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত। এখন চাটমোহরের হাতে গোনা কয়েক জন মানুষ তাঁতের কাজ করে। অন্যরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
প্রিন্ট