ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সরকারি স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক স.ম আবু হেনা বজলুর রশিদ ও সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে বিদ্যালয়ের সরকারি বরাদ্দ, ফান্ড ও পুকুর লীজের ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট  সুত্রে জানা গেছে, স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। ফলে তার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পৃথক তদন্ত কমিটির তদন্তে সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ ও শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সীমাহীন দূর্নীতির তথ্য প্রকাশ পায়।
সুত্র জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ সরদার মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তদন্ত আসলে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে ১১ শিক্ষার্থী ভর্তি, বিদ্যালয়ের ১৩টি ফান্ড ও সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দসহ পুকুর লীজের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি টক অব দ্যা মোহনপুর রুপান্তরিত হয়।
এদিকে গণমাধ্যমের কাছে আসা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত হতে জানা যায়, স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ গত ২৩ ও ২৪ সালে দুইবার মাত্র ২ মাস দুই দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল যোগাসাজশে কৌশলে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা আত্মসাত করেছে।প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিবিধ, মিলাদ, রেড ক্রিসেন্ট, ক্রীড়া,পরিচ্ছন্নতা,কালচার, স্কাউট, ম্যাগাজিন, প্রিন্টিং, কৃষি, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ফান্ড হতে ১১ লাখ ৯০ হাজার ১৭৫ টাকা, সরকারি বরাদ্দ হতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশ টাকা।
স্কুলের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী মিজানুরের মাধ্যমে সাইফুল এককভাবে নিয়েছে ২০২৩-২৪ বাজেট ২৬ নম্বর বিলের ২২ হাজার টাকা, ৩০ নম্বর বিলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যালয়ের দুটি পুকুর লীজ বাবদ তিন বছরের ভ্যাটসহ ৯৭ হাজার টাকা গ্রহণ করে সাইফুল ইসলাম। পুকুর লীজ গ্রহীতার অভিযোগ থেকে জানাগেছে।সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে মার্কার কলম, হোয়াইট বোর্ড, পতাকা স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয় দেখানো হলেও বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে মালামালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি তদন্ত কমিটি। এমনকি স্কুলের ১৩ ফান্ড হতে উত্তোলন করা চাহিদা খাতা ও ফান্ড রেজিস্ট্রারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ম্যাগাজিন ছাপানোর কথা বলা হলেও তা ছাপানো হয়নি। টাকার ভাউচারে আহবায়ক ও সদস্যদের স্বাক্ষর নাই, চেকের মুড়িতে প্রদত্ত স্বাক্ষরের মিল নাই। টাকা খরচ করা হয়েছে কিন্তু কোন তথ্য নাই।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর  উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হারানো ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মাউস, চার্জার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্কুলে জমা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত ৮ জুন  অত্র বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতি, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফান্ডের আর্থিক অনিয়ম, পুকুর লীজ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ভাংচুর, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
নিউজ প্রকাশের পর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা শিক্ষক সাইফুল ইসলামের অনিয়ম খুজতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। তদন্ত শেষে কমিটি বিধি বর্হিভুতভাবে সপ্তম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল প্রধান শিক্ষকে প্রভাবিত করে সুকৌশলে বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ছাত্রদের সঙ্গে অকারনে দুর্ব্যবহার ও সাময়িক সাসপেনশন প্রদান ও ক্লাসে অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বদলি চেয়ে গত ১৮ আগষ্ট হতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা রাজশাহী- নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ঘেরাও এবং উক্ত শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসরুম বর্জনের মতো কর্মসূচীর মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। যার ফলে মোহনপুর উপজেলায় দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যাঘাত, মহাসড়কে যানজট এবং শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনের তীব্রতার কারনে গত ২০ আগষ্ট উপস্থিত ছাত্রজনতার দাবির মুখে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয় হতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ অভিযুক্ত শিক্ষকের বদলির বিষয়ে ছাত্রদের আশ্বাস দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা শ্রেণীকক্ষে ও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যায়।কিন্ত্ত গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এরিপোর্ট লেখা পর্যস্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক সাইফুল তার ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগতের নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের দেখে নেওয়ার হুমকি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ মুঠোফোনে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানোয় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষক সাইফুল ইসলামের অনিয়ম, দূর্ণীতির বিষয়টি ওসি, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) থেকে সর্বশেষ বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী পর্যন্ত গড়িয়েছে তাকে অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করেন মোহনপুর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা। তবুও অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বদলী হয়নি।
এবিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড.শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মাউশি-তে পাঠানো হয়েছে। এখন রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন মাউশি। সাবেক প্রধান শিক্ষকের সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারেন না। যদি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক যোগসাজশ করেন সেটাও প্রমান হবে। তবে বর্তমান শিক্ষক অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আবেদনে না বলে এড়িয়ে গেছেন।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

সরকারি স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

আপডেট টাইম : ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক স.ম আবু হেনা বজলুর রশিদ ও সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে বিদ্যালয়ের সরকারি বরাদ্দ, ফান্ড ও পুকুর লীজের ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট  সুত্রে জানা গেছে, স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। ফলে তার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পৃথক তদন্ত কমিটির তদন্তে সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ ও শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সীমাহীন দূর্নীতির তথ্য প্রকাশ পায়।
সুত্র জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ সরদার মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তদন্ত আসলে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে ১১ শিক্ষার্থী ভর্তি, বিদ্যালয়ের ১৩টি ফান্ড ও সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দসহ পুকুর লীজের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি টক অব দ্যা মোহনপুর রুপান্তরিত হয়।
এদিকে গণমাধ্যমের কাছে আসা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত হতে জানা যায়, স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ গত ২৩ ও ২৪ সালে দুইবার মাত্র ২ মাস দুই দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল যোগাসাজশে কৌশলে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা আত্মসাত করেছে।প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিবিধ, মিলাদ, রেড ক্রিসেন্ট, ক্রীড়া,পরিচ্ছন্নতা,কালচার, স্কাউট, ম্যাগাজিন, প্রিন্টিং, কৃষি, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ফান্ড হতে ১১ লাখ ৯০ হাজার ১৭৫ টাকা, সরকারি বরাদ্দ হতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশ টাকা।
স্কুলের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী মিজানুরের মাধ্যমে সাইফুল এককভাবে নিয়েছে ২০২৩-২৪ বাজেট ২৬ নম্বর বিলের ২২ হাজার টাকা, ৩০ নম্বর বিলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যালয়ের দুটি পুকুর লীজ বাবদ তিন বছরের ভ্যাটসহ ৯৭ হাজার টাকা গ্রহণ করে সাইফুল ইসলাম। পুকুর লীজ গ্রহীতার অভিযোগ থেকে জানাগেছে।সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে মার্কার কলম, হোয়াইট বোর্ড, পতাকা স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয় দেখানো হলেও বিল ভাউচার পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে মালামালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি তদন্ত কমিটি। এমনকি স্কুলের ১৩ ফান্ড হতে উত্তোলন করা চাহিদা খাতা ও ফান্ড রেজিস্ট্রারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ম্যাগাজিন ছাপানোর কথা বলা হলেও তা ছাপানো হয়নি। টাকার ভাউচারে আহবায়ক ও সদস্যদের স্বাক্ষর নাই, চেকের মুড়িতে প্রদত্ত স্বাক্ষরের মিল নাই। টাকা খরচ করা হয়েছে কিন্তু কোন তথ্য নাই।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর  উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হারানো ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মাউস, চার্জার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্কুলে জমা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত ৮ জুন  অত্র বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতি, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফান্ডের আর্থিক অনিয়ম, পুকুর লীজ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ভাংচুর, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
নিউজ প্রকাশের পর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা শিক্ষক সাইফুল ইসলামের অনিয়ম খুজতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। তদন্ত শেষে কমিটি বিধি বর্হিভুতভাবে সপ্তম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল প্রধান শিক্ষকে প্রভাবিত করে সুকৌশলে বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ছাত্রদের সঙ্গে অকারনে দুর্ব্যবহার ও সাময়িক সাসপেনশন প্রদান ও ক্লাসে অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বদলি চেয়ে গত ১৮ আগষ্ট হতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা রাজশাহী- নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ঘেরাও এবং উক্ত শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসরুম বর্জনের মতো কর্মসূচীর মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। যার ফলে মোহনপুর উপজেলায় দাপ্তরিক কাজকর্মে ব্যাঘাত, মহাসড়কে যানজট এবং শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনের তীব্রতার কারনে গত ২০ আগষ্ট উপস্থিত ছাত্রজনতার দাবির মুখে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয় হতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ অভিযুক্ত শিক্ষকের বদলির বিষয়ে ছাত্রদের আশ্বাস দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা শ্রেণীকক্ষে ও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যায়।কিন্ত্ত গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এরিপোর্ট লেখা পর্যস্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক সাইফুল তার ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগতের নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের দেখে নেওয়ার হুমকি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স,ম আবু হেনা বজলুর রশিদ মুঠোফোনে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানোয় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষক সাইফুল ইসলামের অনিয়ম, দূর্ণীতির বিষয়টি ওসি, ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) থেকে সর্বশেষ বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী পর্যন্ত গড়িয়েছে তাকে অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করেন মোহনপুর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা। তবুও অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বদলী হয়নি।
এবিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড.শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মাউশি-তে পাঠানো হয়েছে। এখন রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন মাউশি। সাবেক প্রধান শিক্ষকের সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারেন না। যদি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক যোগসাজশ করেন সেটাও প্রমান হবে। তবে বর্তমান শিক্ষক অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আবেদনে না বলে এড়িয়ে গেছেন।

প্রিন্ট