যশোরের অভয়নগরের ভাটপাড়া গ্রামে গরুর খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন সবিতা রাণী দে নামে এক গৃহবধূ। নিখোঁজের ৩৩ ঘন্টা পর প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে গরুর খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের দেবপাড়া এলাকার মিলন কুমার দে’র স্ত্রী সবিতা রানী দে (৪৮)। মিলন পেশায় একজন চা বিক্রেতা। ভাটপাড়া বাজারে তার দোকান রয়েছে।
নিহতের স্বামী মিলন কুমার দে বলেন, ‘সোমবার সকালে যখন দোকানে যাই তখন সবিতা গরুর খাবার সংগ্রহ করতে বাড়ির পাশের একটি বাঁশ বাগানে যায়। দুপুরে ফোন করলে সবিতার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দ্রুত বাড়ি ফিরে দেখি ঘরের দরজা তালাবদ্ধ। এ সময় প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। রাত অবধি সবিতার কোনো সন্ধান না পেয়ে স্থানীয় ভাটপাড়া পুলিশ ক্যাম্পে বিষয়টি জানাই। পরদিন মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভয়নগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। একই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানতে পারি সবিতার মরদেহ প্রতিবেশী নিয়ামুলের (রাজমিস্ত্রী) বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রতিবেশী পরিমল রায় বলেন, খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাজমিস্ত্রি নিয়ামুল ইসলামের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনার এক পাশ উঁচু দেখে সন্দেহ হয়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ওই ট্যাংকের ঢাকনা খোলা হলে ভেতরে সবিতার মরদেহ দেখা যায়। খবর পেয়ে অভয়নগর থানার পুলিশ সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত গৃহবধূর স্বামী মিলন কুমার দে’র ভাগনে তাপস কুমার দে বলেন, মামা মামির দুই মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে মামা ও মামি দুজনে থাকতেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুজন একসাথে সকালের নাস্তা করেন। দুপুরের খাবার নিয়ে মামা দোকানে চলে গেলে সকাল ৯টার দিকে মামি ঘরে তালা দিয়ে একটি ঝুড়ি নিয়ে গরুর খাদ্য বাঁশের পাতা সংগ্রহ করতে পাশের বাঁশ বাগানে যান। এরপর থেকে তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। দুপুরে কয়েকবার ফোন করে মামিকে না পেয়ে মামা পাশের বাড়ির এক গৃহবধূকে বিষয়টি জানান। তিনি বাড়িতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ওই নারী প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানালে তার খোঁজ শুরু হয়। এলাকার লোকজন বাঁশ বাগানে গিয়ে তার মাথার খোঁপা এবং কয়েকটি বাঁশের পাতা পড়ে থাকতে দেখেন। গভীর রাত পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিহত সবিতার দুই মেয়ে শুক্লা দে ও বৈশাখী দে বলেন, ‘আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে গুম করার উদ্দেশ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাটাপাড়া গ্রামে রাজমিস্ত্রি নিয়ামুলের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে সবিতা রাণী দে নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
প্রিন্ট