যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের তিনবেলা খাবার (পথ্য) সরবরাহ কার্যক্রম দীর্ঘ এক যুগ পর একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে।
যশোরের নবাগত জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজাহারুল ইসলামের অনুরোধে এবং ছাত্র সমন্বয়কদের চেষ্টায় মামলা তুলে নিতে সম্মতি জানিয়েছেন ঠিকাদার হাফিজুর রহমান। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একজন আইনজীবীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন টেন্ডার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী। তখন সরকারি বরাদ্দকৃত ১৭৫ টাকার উন্নত মানের খাবার পাবে রোগীরা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের খাবার সরবরাহের টেন্ডার হয়। সেই সময় ঠিকাদার মোঃ শফিকুর রহমান হাসপাতালের নির্ধারিত ২৫০ শয্যা এবং করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮ শয্যাসহ মোট ২৭৮ জন রোগীর খাবার সরবরাহের কার্যাদেশ পান। এ সময় টেন্ডারে ত্রুটির অভিযোগ তুলে আরেক ঠিকাদার হাফিজুর রহমান ২০১৪ সালের ১৬ জুন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আদালতের নির্দেশে নতুন করে টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সেই থেকে টানা ১২ বছর একই প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করে আসছেন। যে কারণে ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা। একই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত খাবারের মান এবং পরিমাপ নিয়ে। নির্ধারিত খাবারের পরিমাপ সঠিকভাবে পাইনা বলে দাবি রোগী ও তার স্বজনদের। নিম্নমানের ও পরিমাণে খুবই কম হওয়ায় রোগীরা এই খাবার মুখে নিতে পারেন না।
সূত্রটি আরো জানায়, সেই সময়ের দরপত্র অনুযায়ী হাসপাতালে জনপ্রতি দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকার খাবার। এর মধ্যে ভ্যাট- ট্যাক্স বাদ দিলে ১১৩ টাকা থাকে। এই টাকায় প্রত্যেক রোগীর সকালের নাস্তা হিসেবে ১০০ গ্রাম পাউরুটি, একটি ডিম ও দুই পিস কলা পাওয়ার কথা। আর দুপুরে ভাতের সঙ্গে ৮০ গ্রাম মাছ বা মাংস, ২০ গ্রাম ডাল এবং রাতে ভাত, ডিম ও সবজি প্রাপ্য। কিন্তু সেটি পাচ্ছেন না রোগীরা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ রোগী ও তাদের স্বজনরা নিম্নমানের ও পরিমাণে খুবই কম খাবার পাওয়ার বিষয়টি ভয়ে মুখ খুলতে চান না। খাবার না পেলেও ফ্লোরে জায়গা পেয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন; এটাই যেন তাদের জন্য অনেক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগী ও তার স্বজনরা বলেন, তরকারিতে মাছ মাংসের গন্ধ থাকে। কিন্তু এক টুকরো মাছ মাংসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। ভাতের পরিমাণও কয়েক মুঠো। আর তরকারির মধ্যে এক চামচ ডাল দিয়ে দায় সারা হয়। এই খাবার রোগী খেতে পারেন না। অনেকে খাবার নেন না। আবার কেউ কেউ খাবার নিলেও রোগীরা তা খান না।
রোগী ও তার স্বজনরা খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে হাসপাতালের স্টুয়ার্ড মোঃ শাহজাহান দাবি করেন, নির্ধারিত পরিমাপেই মানসম্মত খাবার রোগীদের সরবরাহ করা হয়।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ জানিয়েছেন, খাবারের মান নিয়ে খোদ তত্ত্বাবধায়কও সন্তুষ্ট নন। উচ্চ আদালতের মামলার দোহাই দিয়ে টানা ১২ বছর একই ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করে আসছেন। দীর্ঘদিন টেন্ডার না হওয়ায় বরাদ্দের পরিমাণ বাড়েনি। ফলে রোগীর খাবারের পরিমাণ ও গুণগত মান কমেছে।
দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলা এই সমস্যা সমাধানের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্যোগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক যশোরের কার্যালয়ে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ খান, ঠিকাদার হাফিজুর রহমান এবং অ্যাড. মোহাম্মাদ ইসহাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, মিটিংএ জেলা প্রশাসক মহোদয় ঠিকাদার হাফিজুর রহমানকে মামলা তুলে নিতে অনুরোধে করেন। সমন্বয়কদের চেষ্টায় ঠিকাদার দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা তুলে নিতে সম্মতি জানিয়েছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী মোহাম্মাদ ইসহাককে দায়িত্ব দেন।
- আরও পড়ুনঃ তানোরে নিম্নমাণের কীটনাশকে বাজার সয়লাব
ডাঃ হারুন অর রশিদ আরো বলেন, তিনবেলা এই খরচে খাদ্যের মান ও পরিমান ঠিক রাখা একটু কঠিন। তবুও আমি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। যতটুকু সম্ভব কম লাভ করে রোগীকে ভাল মানের খাবার দেয়া যায়, সে ব্যাপারে ঠিকাদার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রিন্ট