রাজশাহীর তানোরে ৭টি ইউনিয়নের (ইউপি) অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ জেনারেল রিলিফের (জিআর) ১৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ না করে কৌশলে গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এসব চাল গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ এসব চাল বিতরণ না করে বন্যা দুর্গত এলাকায় ফেরত দেয়ার কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে উত্তোলন পত্রে কৌশলে স্বাক্ষর করে নেয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিন তদন্ত করলেই সত্যতা মিলবে চাল লুটের ঘটনার। এবিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ে গত কয়েক দিন ধরে তথ্য নিতে গেলে পিআইও আল-মামুনকে পাওয়া যায়নি এবং তার সরকারি (০১৭০০-৭১৬৯৩৪) মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এমনকি জেলা কর্মকর্তার কাছেও তথ্য চাইলে দিতে পারেনি।
উপজেলা খাদ্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উপজেলার কলমা ইউপিতে ৪ মেট্রিক টন, বাঁধাইড় ইউপিতে ২ মেট্রিক টন, পাঁচন্দর ইউপিতে ২ মেট্রিক টন, সরনজাই ইউপিতে ১ মেট্রিক টন, তালন্দ ইউপিতে ২ মেট্রিক টন, কামারগাঁ ইউপিতে ২ মেট্রিক টন ও চান্দুড়িয়া ইউপিতে ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব বরাদ্দকৃত চালের ডিওলেটার হয় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে।
উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মলিউজ্জামান সবিজ জানান, পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দ হয়েছে। খাদ্য অফিস ডিও দেয়ার মালিক। চাল বিতরণ হবে কিনা সেটা পিআইও এবং নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন এটা দেখা তার কাজ নয়।
এদিকে গত বুধবার খাদ্য অফিসে ভিজিএফ চালের ডিওলেটার নিতে আসেন তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় জিআরের চাল বিতরণ হয়েছে কিনা তিনি কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। এই চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার ঘনিস্ঠ সহচর।
তার সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় কলমা ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী খাদ্য অফিসে আসেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, খাদ্য অফিসে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে। চাল পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত পায়নি।
তালন্দ ইউপির সচিব ওয়াকিল জানান, আমরা ২ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিলাম। কিন্তু বন্য কবলিত এলাকায় দিবে বলে ফেরত নেয়। শুধু সরনজাই ইউনিয়ন বিতরণ করতে পেরেছে। তানোর সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মুকুলের কাছে জানতে চাওয়া হয় বরাদ্দকৃত জিআরের চাল কিভাবে ফেরত যাই তিনি জানান চাল বরাদ্দ হলে সেটা ফেরত যায় না, সবাই চাল তুলেছে।
একাধিক ইউপি সদস্য জানান, তাদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানরা তালিকা নিয়েছিল। কিন্তু চাল দেয় নি। কিছু বললেই সাব কথা পরে দেখা যাবে। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। এক ইউপি বাদে সব ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। কোন কিছু বলাও যেত না। ইচ্ছে মত তারা সবকিছু করত। কলমা ইউপির চেয়ারম্যান(স্বতন্ত্র) তাকেও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো।
এবিষয়ে জানতে বাঁধাইড় ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের মোবাইলে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। গত বুধবার দুপুরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন আল ওয়াদুদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি জানান, এসব চাল আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই, খোঁজ খবর নিয়ে এমন হয়ে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মাসতুরা আমিনার সরকারি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনিয়ম দূর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। যারাই চাল আত্মসাতের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।