রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কশবামাজাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অবকাঠামো সংকট বিরাজ করছে। পুরাতন তিনটি ভবনের প্লাস্টার খসে রড বেরিয়ে পড়ছে। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন খান বাহাদুর নাদির হোসেন, আলহাজ্ব ডা. মো. মোফাজ্জল হোসেন, এম. তোসাদ্দক হোসেন, এহতেশাম হুসাইন, আলহাজ্ব এম. আফজাল হুসাইন, মো. মশিউর রহমান (মাখন বিশ্বাস) প্রমূখ স্মরণীয় হয়ে আছেন। স্থানীয়দের অনুদানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দীর্ঘ ৬০ বছরে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংকট দূরীকরণে সরকারি ভাবে বড় ধরণের কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৯৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত একতলা বিশিষ্ট ভবন এবং স্থানীয়দের অনুদানে নির্মিত পুরাতন দু’টি ভবনের বেহাল দশা। ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টার খসে রড বের হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের কক্ষ, ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শ্রেণী কক্ষ, মশিয়ার রহমান মিলনায়তন, কবি সুফিয়া কামাল গার্লস হোম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও আয়েসা হোসেন স্মৃতি পাঠাগার এবং কম্পিউটার সাক্ষরতা কেন্দ্র, ল্যাব সেন্টারসহ বিদ্যালয়ের সবগুলো স্থাপনার বেহাল দশা দৃশ্যমান। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এসএসসির ফলাফল, সরকারিভাবে বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ছাত্রীরা বিভিন্ন সময় দেশ সেরা খ্যাতি অর্জন করে বিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে এনেছে। এসবের মধ্যে এসএসসিতে ২০১৭ সালে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড লাভ করে। পাংশা উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ২০২২ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে আফিয়া সুলতানা এবং ২০২৩ সালে মুক্তা রানী মনোনীত হয়। এসএসসিতে বিদ্যালয়ের পাশের হার সন্তোষজনক। বর্তমানে প্রায় চারশ’ ছাত্রী বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমল চন্দ্র মন্ডল জানান, ১৯৬৪ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ের দু’টি ভবনসহ নানা স্থাপনা স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে নির্মিত একটি ভবন এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্মিত দু’টি ভবন সব গুলোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে রড বের হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষকরা। ছাদের প্লাস্টার খসে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে অবকাঠামো সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। অবকাঠামো সংকট দূরীকরণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন প্রধান শিক্ষক কমল চন্দ্র মন্ডল।
এ ব্যাপারে পাংশা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করা হয়েছে। নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি অবদান রাখছে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনগুলো পুরাতন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে বহুতল বিশিষ্ট একটি ভবন খুবই প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি তার দপ্তর থেকে প্রয়োজনী প্রস্তাব পাঠাবেন বলে জানান।