ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১২

-ছবিঃ প্রতীকী।

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখল করে চাঁদাবাজি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

 

সংঘর্ষের ঘটনা আহত হয়েছে, দৌলতপুর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিক আহমেদ, ছাত্রদলের নেতা পারভেজ। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল কর্নেল, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রতন, তারা দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক সমিতির লোকজন, স্ট্যাম্প ভেণ্ডারের মালিকরা ও স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্রটি রমরমা ঘুষ বাণিজ্য করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ঘুষের টাকার ভাগ সাব-রেজিস্ট্রার, আওয়ামী লীগের নেতাদের পকেটে চলে যেত।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নিয়ন্ত্রণ করা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্যও দিতে পারছেন না। তারা এখন কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছেন তা কেউ জানেন না। তারা এলাকা ছেড়ে পালানোর পর পরই বিএনপির একটা গ্রুপ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখলে নেন এবং চাঁদাবাজি শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে অফিস দখল করে চাঁদাবাজি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির অপর একটা গ্রুপ তৈরি হয়। বিএনপির এই দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই গ্রুপের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছিলেন লাখ লাখ টাকা। সাব-রেজিস্ট্রার ও দালাল চক্রের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য অতিরিক্ত ২৫০০ টাকা আদায় করা হয়। নামের ভুল থাকলে ঘুষ দিতে হয়। পরিচয়পত্র অনলাইন থেকে প্রিন্ট করাতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। দলিলের দাম বেশি নেওয়া হয় ও প্রতিটি সেবার জন্য পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি চাঁদাবাজি করে আসছিল। তারা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। কয়েকদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখলসহ চাঁদাবাজির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

এ বিষয়ে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

 

 

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১২

আপডেট টাইম : ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার :

সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখল করে চাঁদাবাজি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

 

সংঘর্ষের ঘটনা আহত হয়েছে, দৌলতপুর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিক আহমেদ, ছাত্রদলের নেতা পারভেজ। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল কর্নেল, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রতন, তারা দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক সমিতির লোকজন, স্ট্যাম্প ভেণ্ডারের মালিকরা ও স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্রটি রমরমা ঘুষ বাণিজ্য করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ঘুষের টাকার ভাগ সাব-রেজিস্ট্রার, আওয়ামী লীগের নেতাদের পকেটে চলে যেত।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নিয়ন্ত্রণ করা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্যও দিতে পারছেন না। তারা এখন কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছেন তা কেউ জানেন না। তারা এলাকা ছেড়ে পালানোর পর পরই বিএনপির একটা গ্রুপ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখলে নেন এবং চাঁদাবাজি শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে অফিস দখল করে চাঁদাবাজি, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির অপর একটা গ্রুপ তৈরি হয়। বিএনপির এই দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই গ্রুপের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছিলেন লাখ লাখ টাকা। সাব-রেজিস্ট্রার ও দালাল চক্রের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য অতিরিক্ত ২৫০০ টাকা আদায় করা হয়। নামের ভুল থাকলে ঘুষ দিতে হয়। পরিচয়পত্র অনলাইন থেকে প্রিন্ট করাতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। দলিলের দাম বেশি নেওয়া হয় ও প্রতিটি সেবার জন্য পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি চাঁদাবাজি করে আসছিল। তারা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে। কয়েকদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দখলসহ চাঁদাবাজির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

এ বিষয়ে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

 

 

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট