ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

এস আলমের গাড়ি কাণ্ড

কপাল পুড়ল বিএনপির সেই তিন নেতার

-ছবিঃ সংগৃহীত।

দেশজুড়ে আলোচিত এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি নিরাপদে সরিয়ে নিতে সহযোগিতার গুরুতর অভিযোগে কপাল পুড়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিন প্রভাবশালী নেতার। দল থেকে স্থগিত করা হয়েছে এই তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব ধরণের পদ। একইসঙ্গে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।

 

এস আলম গ্রুপের গাড়ি কাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত এই তিন নেতা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া। এদের মধ্যে শেষের দুইজন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠজন বলে আগে থেকেই পরিচিত।

 

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি চিঠিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি ও তিন নেতার সদস্য পদ স্থগিতের কথা জানানো হয়।

 

একটি চিঠিতে বলা হয়, আজ দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবেনা। পৃথক আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এম এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের একটি ওয়্যারহাউজ থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার তত্ত্বাবধানে গভীর রাতে ১৪ বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হলে তা নজরে আসে বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহলের। ওইদিনই কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পেয়ে তড়িঘড়ি এক সংবাদ সম্মেলন করে গাড়ি সরিয়ে নিতে সহযোগিতার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেন ওই তিন নেতা। উল্টো একটি মহলের ইশারায় এ ধরণের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের দিনে অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান।

 

দলীয় সূত্র জানায়, নোটিশ প্রাপ্ত তিন নেতা সরাসরি ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নোটিশের জবাব দেন এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। জবাবে তারা সংবাদ সম্মেলনে আওড়ানো বুলির পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, মূলত মীর গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে বিএনপির নামে চাঁদাবাজির খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিন নেতার এই জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্র থেকে তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠনের নির্দেশনা ছিল আহ্বায়ক কমিটির প্রতি। কিন্তু বিগত প্রায় পাঁচ বছরে তাঁর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এ নিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলে এক ধরণের অসন্তোষও বিরাজ করছিল আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের প্রতি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

এস আলমের গাড়ি কাণ্ড

কপাল পুড়ল বিএনপির সেই তিন নেতার

আপডেট টাইম : ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

দেশজুড়ে আলোচিত এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি নিরাপদে সরিয়ে নিতে সহযোগিতার গুরুতর অভিযোগে কপাল পুড়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিন প্রভাবশালী নেতার। দল থেকে স্থগিত করা হয়েছে এই তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব ধরণের পদ। একইসঙ্গে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।

 

এস আলম গ্রুপের গাড়ি কাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত এই তিন নেতা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া। এদের মধ্যে শেষের দুইজন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠজন বলে আগে থেকেই পরিচিত।

 

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি চিঠিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি ও তিন নেতার সদস্য পদ স্থগিতের কথা জানানো হয়।

 

একটি চিঠিতে বলা হয়, আজ দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবেনা। পৃথক আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এম এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের একটি ওয়্যারহাউজ থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার তত্ত্বাবধানে গভীর রাতে ১৪ বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হলে তা নজরে আসে বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহলের। ওইদিনই কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পেয়ে তড়িঘড়ি এক সংবাদ সম্মেলন করে গাড়ি সরিয়ে নিতে সহযোগিতার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেন ওই তিন নেতা। উল্টো একটি মহলের ইশারায় এ ধরণের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের দিনে অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান।

 

দলীয় সূত্র জানায়, নোটিশ প্রাপ্ত তিন নেতা সরাসরি ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নোটিশের জবাব দেন এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। জবাবে তারা সংবাদ সম্মেলনে আওড়ানো বুলির পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, মূলত মীর গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে বিএনপির নামে চাঁদাবাজির খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিন নেতার এই জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্র থেকে তাঁদের সদস্যপদ স্থগিত এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠনের নির্দেশনা ছিল আহ্বায়ক কমিটির প্রতি। কিন্তু বিগত প্রায় পাঁচ বছরে তাঁর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এ নিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলে এক ধরণের অসন্তোষও বিরাজ করছিল আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের প্রতি।


প্রিন্ট