কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত মইনুর রহমান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতের ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত থাকায় বাবার ওপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের।
বুধবার (২১আগষ্ট) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের ছোট ভাই মোজ্জামেল হক ও ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া।
গত ৯ আগস্ট শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দৌলতপুর বালিরদিয়ার গ্রামে মইনুর রহমানকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
নিহত মইনুল ইসলাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালিরদিয়ার গ্রামের গাজী প্রামানিকের ছেলে। তিনি ইজিবাইক চালক ছিলেন। একই সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসাও করতেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র তার ছেলে তামিম। ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকায় বাবার ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঘটনায় স্বজনরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করে। আরও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন, রাজিব মোল্লা (৩০), শিপুল মোল্লা (৩০), আলম মোল্লা (৪৮), ইউসুফ মোল্লা (৩৮), সবুজ মোল্লা (২৫), বক্কর মোল্লা (৫৬), টিপু মোল্লা (৪০), চঞ্চল মোল্লা (৩২), জাদু মোল্লা (৪২), টুকন মোল্লা (৩৮), সোহেল মোল্লা (৪০), জানবার মোল্লা, শামীম মোল্লা (২৫), শাকিল মন্ডল (৩২) ও কলম মোল্লা (৪০)।
তিনি আরও জানান, হুমকিতে ভয় পেয়ে ঘটনার দিন মইনুর রহমান তামিমকে বাড়ি থেকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। সেই কথামতো তিনি বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যান।
তামিম বলেন, তার বাবা ইজিবাইকে করে বিভিন্ন দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন। ৯ আগস্ট রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে টাকা কালেকশনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় নিজ গ্রামে তার পথ রোধ করে দুর্বৃত্তরা। সেখানেই তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকলে ককটেল বিস্ফোরণ করে এবং ফাঁকা গুলি করে তারা পালিয়ে যায়।
গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ওই দিনই সদর হাসপাতাল নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হয়, সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডান হাতটি পুরোপুরি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মোজাম্মেল হক বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলে তামিম কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেন। তিনি কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে তার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। যারা এ ঘটনায় জড়িত তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বালিরদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লা বংশের লোকজন আমার বড় ভাইয়ের ওপর হামলা করে। ভাই মোজ্জামেল হকের অবস্থার অবনতি দেখে ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার সকালে মারা গেছেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
প্রিন্ট