ঢাকা , সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় হচ্ছে নতুন ব্রিজ, পারাপারের বিকল্প না থাকায় চরম ভোগান্তি

কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের ওপর দিয়ে অপ্রশস্ত ব্রিজ ভেঙে সেখানে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। নির্মাণাধীন সেতুটির বিকল্প চলাচলের জন্য দক্ষিণ পাশেই অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সাঁকো। বাঁশ ও কাঠের তৈরি এই সাঁকোটি প্রায়ই ডুবে যায় জিকে খালের পানি বেড়ে। সাঁকোর ওপর পানি উঠে পড়ায় চলাচলে রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিকল্প বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

 

চলতি বছরের ১৩ জুন কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান সেচ খালের ওপর নতুন সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু বিকল্প পারাপারের ব্যবস্থা না রেখেই খালের ওপর থাকা পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলা হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই সেতু দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া অসংখ্য যানবাহনসহ কয়েক হাজার মানুষ।

 

গত কয়েক দিন হলাে পানি বেড়ে স্রোত বৃদ্ধি পেলে বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ। কাজের ধীর গতিতে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, কবে শেষ হবে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। আর ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকোই টিকবে কতদিন।

 

স্থানীয়রা জানান, ব্রিজের পূর্ব পাশে মিরপুর পৌরসভা এবং পশ্চিম পাশে মিরপুর থানা ও মিরপুর উপজেলা প্রশাসনের সব অফিস এবং ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়াও মিরপুরের এলাকাটিতে অনেক স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। মিরপুর উপজেলা পরিষদ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা ও দৌলতপুরের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে পার হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতেন। এছাড়াও প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ব্রিজটি ব্যবহার করে মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মাহমুদা চৌধুরী কলেজ ও মিরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে।

 

মিরপুর উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা ও দৌলতপুরের রোগী বহনকারী অনেক অ্যাম্বুলেন্স সেতুটি দিয়ে পারাপার হতো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু ভাঙার আগে কাছাকাছি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে তড়িঘড়ি করে সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়। বাঁশ দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাঁশের সাকো নির্মাণ করা হলেও অনেক সময় সেটি পানিতে তলিয়ে থাকে। সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। যানবাহন পারাপারের বিকল্প কোনও রাস্তা নির্মাণ না করায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

 

অথচ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ মিরপুর উপজেলাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে যাওয়া-আসা করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে পার্শ্ববর্তী পালপাড়া ব্রিজ ঘুরে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস, থানায় আসতে হয়। কিন্তু পালপাড়া সেতুতে প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। ফলে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে কুরিপোল ব্রিজ দিয়ে উপজেলা শহরে ঢুকতে হলে আরও চার কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। এতে ব্যয় হয় অতিরিক্ত অর্থ ও সময়।

 

স্থানীয় ধুবাইল গ্রামের আতাহার আলী বলেন, এই সেতু দিয়ে আমার পাঁচ বছরের নাতিকে প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সেতুটি ভেঙে ফেলায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।

 

স্থানীয় মিরপুর পৌরসভার সুলতানপুর গ্রামের মোমনিুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বর্ডার গার্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় প্রতিদিন তাকে অনেক রাস্তা ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। তাছাড়াও মুমূর্ষু রোগীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। এতে অনেককে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অতিদ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাই।

 

 

মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আ: করিম জানান, উপজেলার সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস ব্রিজের অপর প্রান্তে। ব্রিজ ভাঙা হয়েছে অথচ বিকল্প কোনও পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিকল্প রাস্তা হিসেবে স্থানীয় পালপাড়া দিয়ে মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ওই পালপাড়ার ব্রিজ প্রশস্ত কম হাওয়ার কারণে অনেক সময় যানজট লেগেই থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্রিজের অপর পাশে যেতে হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। দ্রুত পারাপারের জন্য ভালো কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

হাতিয়ায় ভূমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত জমি বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় হচ্ছে নতুন ব্রিজ, পারাপারের বিকল্প না থাকায় চরম ভোগান্তি

আপডেট টাইম : ০৪:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪
ইসমাইল হােসেন বাবু, ষ্টাফ রিপােটার :

কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের ওপর দিয়ে অপ্রশস্ত ব্রিজ ভেঙে সেখানে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। নির্মাণাধীন সেতুটির বিকল্প চলাচলের জন্য দক্ষিণ পাশেই অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সাঁকো। বাঁশ ও কাঠের তৈরি এই সাঁকোটি প্রায়ই ডুবে যায় জিকে খালের পানি বেড়ে। সাঁকোর ওপর পানি উঠে পড়ায় চলাচলে রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিকল্প বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

 

চলতি বছরের ১৩ জুন কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান সেচ খালের ওপর নতুন সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু বিকল্প পারাপারের ব্যবস্থা না রেখেই খালের ওপর থাকা পুরাতন সেতু ভেঙে ফেলা হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই সেতু দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া অসংখ্য যানবাহনসহ কয়েক হাজার মানুষ।

 

গত কয়েক দিন হলাে পানি বেড়ে স্রোত বৃদ্ধি পেলে বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ। কাজের ধীর গতিতে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, কবে শেষ হবে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। আর ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকোই টিকবে কতদিন।

 

স্থানীয়রা জানান, ব্রিজের পূর্ব পাশে মিরপুর পৌরসভা এবং পশ্চিম পাশে মিরপুর থানা ও মিরপুর উপজেলা প্রশাসনের সব অফিস এবং ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়াও মিরপুরের এলাকাটিতে অনেক স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। মিরপুর উপজেলা পরিষদ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা ও দৌলতপুরের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে পার হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতেন। এছাড়াও প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ব্রিজটি ব্যবহার করে মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মাহমুদা চৌধুরী কলেজ ও মিরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে।

 

মিরপুর উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা ও দৌলতপুরের রোগী বহনকারী অনেক অ্যাম্বুলেন্স সেতুটি দিয়ে পারাপার হতো। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু ভাঙার আগে কাছাকাছি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে তড়িঘড়ি করে সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়। বাঁশ দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাঁশের সাকো নির্মাণ করা হলেও অনেক সময় সেটি পানিতে তলিয়ে থাকে। সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। যানবাহন পারাপারের বিকল্প কোনও রাস্তা নির্মাণ না করায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

 

অথচ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ মিরপুর উপজেলাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে যাওয়া-আসা করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে পার্শ্ববর্তী পালপাড়া ব্রিজ ঘুরে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস, থানায় আসতে হয়। কিন্তু পালপাড়া সেতুতে প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। ফলে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে কুরিপোল ব্রিজ দিয়ে উপজেলা শহরে ঢুকতে হলে আরও চার কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। এতে ব্যয় হয় অতিরিক্ত অর্থ ও সময়।

 

স্থানীয় ধুবাইল গ্রামের আতাহার আলী বলেন, এই সেতু দিয়ে আমার পাঁচ বছরের নাতিকে প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু সেতুটি ভেঙে ফেলায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।

 

স্থানীয় মিরপুর পৌরসভার সুলতানপুর গ্রামের মোমনিুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বর্ডার গার্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় প্রতিদিন তাকে অনেক রাস্তা ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। তাছাড়াও মুমূর্ষু রোগীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়। এতে অনেককে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অতিদ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাই।

 

 

মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আ: করিম জানান, উপজেলার সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস ব্রিজের অপর প্রান্তে। ব্রিজ ভাঙা হয়েছে অথচ বিকল্প কোনও পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিকল্প রাস্তা হিসেবে স্থানীয় পালপাড়া দিয়ে মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ওই পালপাড়ার ব্রিজ প্রশস্ত কম হাওয়ার কারণে অনেক সময় যানজট লেগেই থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্রিজের অপর পাশে যেতে হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। দ্রুত পারাপারের জন্য ভালো কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।