রাজশাহীর তানোর সরকারী আব্দুল করিম সরকার কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুত্র জানায়,আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলীয় প্রভাব বিস্তার ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোনো ধরনের নিয়োগপত্র ছাড়াই সাইদুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বিগত ২০২৩ সালের জুন মাসে সাইদুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি তার দায়িত্ব বৈধ করতে মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিল সভা আহবান করেন। এই সভা আহবান করা নিয়ে অসন্তোসের সৃষ্টি ে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) কলেজের অর্থ খরচের কোনো সুযোগ না থাকলেও, তিনি আওয়ামী লীগ মতাদর্শী একশ্রেণীর শিক্ষকদের ম্যানেজ করে অর্থ নয়ছয় করেছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন,সরজমিন তদন্ত করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। তারা এসব বিষয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে উপজেলার সরকার আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজ সরকারি করণ করা হয়। এদিকে কলেজ অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান মিঞা অবসর গ্রহণ করলে, তার স্থলাভিষিক্ত হন উপাধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ। কিন্ত্ত তিনি ১৫ আগষ্ট শোকদিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনের পরিবর্তে জিয়ার ভাষণ বাজানোর দায়ে বরখাস্ত হন। এরপর (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষের
দায়িত্ব পান হাবিবুর রহমান শেলি। তিনি অবসরে গেলে রাজনৈতিক বিবেচনায় (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সাইদুর রহমান। এদিকে তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান,বিগত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ব্যবস্থাপনা ফি মাত্র ৫০ টাকা হলেও মাথাপিছু ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়। কলেজের প্রায় ৪১৭ জন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে এসব টাকা আদায় করে তছরুপ করে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষ। এদিকে অনার্স বিভাগেও প্রায় ২২০০ জন শিক্ষার্থী আছে। সেখানেও ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার জায়গায় ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা আদায় করে অধ্যক্ষ তার অনুগত শিক্ষকদের নিয়েএসব টাকা নয়ছয় করেন। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পুরুন চলছে। সেখানে ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার বিপরীতে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। একাডেমিক কাউন্সিল সদস্যদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়ার জন্য রেজুলেশন করা হলেও ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অপরদিকে দীর্ঘদিন যাবত শহরে থাকা কলেজ শিক্ষক ও গ্রামে থাকা শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক দলদলি এবং গ্রুপিং লবিং চলছে।
আবার কোন শিক্ষক পরিষদ না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমান তার নিকটতম অনুসারী নেকছার আলী নামের এক শিক্ষককে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ। তার মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করে থাকেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। যেদিন থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান, সেদিন থেকে কোন ক্লাস নেননা।এতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিভাগের পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
অধিকাংশক্ষেত্রে শহরে থাকা শিক্ষকেরা নিয়মিত কলেজে না আসলেও তাদের বিষয়ে কোম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায় না ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ।সুত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেতে হলে ডিজির নিকট থেকে লিখিত কাগজের প্রয়োজন। কিন্তু সাইদুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দায়িত্বে আছেন। সে কোন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। কিন্তু কিছু নেতাদের হাতে রেখে যাবতীয় অনিয়ম করে চলেছেন তিনি।সরকার পতনের এক সপ্তাহের মধ্যে তার টনক নড়েছে। গত মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহবান করেছেন তিনি। সভা থেকে জোরপূর্বক রেজুলেশন করে তার দায়িত্বে বৈধতা আনবেন।
সিনিয়র এক শিক্ষক জানান, সরকার পতনের পর থেকে নেতারা আত্মগোপনে। দেশ পরিচালিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মনে করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে নয়ছয়ভাবে চলে যাবে। আমি চাই সরেজমিনে তদন্ত করে যোগ্য সিনিয়র শিক্ষককে নিয়ম কানুন মেনে দায়িত্ব দেয়া হোক এবং তার এক বছরের দায়িত্বে লাখ লাখ টাকা তছরুপের বিষয়টিও তদন্ত করে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নেকছার আলীর ০১৭১৮৫৪১৮০০ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক করা হয়েছে। আপনাদের কলেজে নাকি কোন শিক্ষক পরিষদ নেই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি জানান, শিক্ষক পরিষদ না থাকলে আমি কিভাবে সম্পাদক হলাম। আপনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনুসারী শিক্ষক এজন্য করেছে এবং যাবতীয় টাকা নয়ছয়ের জন্য আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এমন প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব নেয়া এক বছর হলো, এক বছরে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়নি এসময় কি কারনে সভা আহবান করা হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মোবাইল নম্বর বন্ধ আর কোন নম্বর আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান মঙ্গলবার কলেজে মিটিং আছে সেখানে এলে সব জানা যাবে আমি এখন নামাজে যাব। ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার বিপরীতে এত টাকা আদায় কেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই সত্য মিথ্যা বেরিয়ে আসবে। কিছু শিক্ষক অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমানে (০১৭১৫-২৪৯৭৮৯) এই মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও শুধু বন্ধ পাওয়া যায়। যার কারনে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রিন্ট