দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইউনিক আইডি ও প্রোফাইল তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে তথ্য চেয়েছে সরকার। এসব তথ্যের মধ্যে শিক্ষার্থী ও তার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদও চাওয়া হয়েছে। জন্মসনদের ত্রুটি সমাধানের জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চাপে এখন হিমশিম খাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরতরা।
শিক্ষার্থীদের অনেকের জন্মসনদ ও শিক্ষাগত সনদে দেয়া তথ্যের মিল নেই। পিতা-মাতার নামের বানান ভুল। জন্ম তারিখের মিল নেই। এসব কারণে ইউনিয়ন পরিষদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপ বেড়েছে বহুগুণে।
এ সুযোগে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে রমরমা ব্যাবসা করে যাচ্ছে মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ। তারা ফির অতিরিক্ত চার থেকে ছয়গুণ টাকা নিয়ে সনদ দিচ্ছেন। একরকম বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে সনদ নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। তাদের এমন অর্থ আদায়ের কারণেই সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। টাকার জোগাড় করতে না পেরে অনেক অভিভাবক এখনো জন্মসনদ সংশোধন করাতে পারেননি।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মারুফা খাতুনেরও জন্মসনদ সংশোধনে সরকারি ফির অতিরিক্ত চারগুণ টাকা গুনতে হয়েছে। এমন অভিযোগ মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদেই।
সরেজমিন উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায়, সংশোধনের আবেদনের জন্য ১০০-১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এরপর বিনা ফিসে সনদ সরবরাহের কথা থাকলেও তারা আবার ১৫০ টাকার বিনিময়ে সনদ দিচ্ছেন। এতে দেখা গেছে, তারা একটি সনদের জন্য ৩০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা এবং জন্মতারিখ ব্যতীত পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফিসে সরবরাহের কথাও বলা হয়েছে।
উপজেলার নিখড়হাটা গ্রামের এক অভিভাবক আলি হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলের জন্য আটটি জন্ম সনদ সংশোধন করেছি বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। তারা আমার কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে মোট ২৪০০ টাকা নিয়েছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত জন্মসনদ সংশোধনের কপি হাতে পাইনি। এরকম টাকা লাগলে ছেলেমেয়েকে পড়ানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।
এভাবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ওই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম স্বীকার করেছেন।
এ নিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নূর ইসলাম জানান, উদ্যোক্তার মাধ্যমেই জানলাম সে সংশোধনে ৩০০ করে টাকা নিচ্ছে। তবে উদ্যোক্তাদের খরচ এবং সরকারি ফিসহ একবারই ১০০ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়ার জন্য বলেছি।
পরিষদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা বলেন, প্রতিদিন দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টা পরিষদে থাকি। এরকম তো নেওয়ার কথা না। তারপরও আমি দেখছি।
টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক অভিভাককে ইউনিয়ন পরিষদে এসে ঘুরতে দেখা গেছে। দীঘা ইউনিয়ন পরিষদে আসা এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলের, আমার আর আমার স্ত্রীর জন্মসনদ সংশোধন করা লাগবে। ৬০০ টাকা চাইছে। আড়াইশ টাকা নিয়ে আসছি। এখনও সংশোধন করাতে পারিনি।
বিনা ফিসে সংশোধিত সনদ সরবরাহের কথা থাকলেও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিকাশ বিশ্বাস। তিনি জানান, উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেই সংশোধিত কপি দিচ্ছি, তারা কিছু টাকা নিচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, সরকারি নির্ধারিত ফিসের বেশি নেওয়ার কথা নয়, তবে এমনটি করলে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রিন্ট