ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন: সারাদিন যা যা ঘটল

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
  • ১৩২ বার পঠিত

-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার জের ধরে সোমবার দিনভর চলা উত্তেজনা এখনও থামেনি। রাতেও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে।

 

এছাড়াও সংঘর্ষ হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকায়ও। রাতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদুল্লাহ হলের বাইরের অবস্থান নিয়েছিলেন। হলের ভেতরে কোটা আন্দোলনের সমর্থনে থাকা শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।

দুই পক্ষই প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার দিকে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম মাকসুদুর রহমান হল প্রভোস্ট ও অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরে গেলে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা।

 

কিন্তু পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেখানে যেতে দেয়নি। পরে কার্জন হলের সামনে ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

তাদের একদফা দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি বলে জানান তিনি।

 

এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সোমবার বেলা বারোটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিসহ শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সমবেত হয়।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা নার্সিং ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের ব্যানার নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়।

 

প্রায় দুই ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ দুপুর প্রায় সোয়া দুইটার দিকে ছেলেদের হলের দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেয়া ও আটকে রাখার খবর পেয়ে তারা সেখানে অগ্রসর হয়।

 

কবি জসীম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি ছেলেদের হল এখানে রয়েছে। হলগুলোর সামনে পৌঁছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

 

বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন হলগুলোর সামনে থেকে পিছিয়ে মলচত্বরে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ডাল ভেঙ্গে হাতে নেয়।

 

এখানে এসে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সোয়া তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থাকা বাকি শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসে।

 

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মল চত্বর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। তাদের সাথে বহিরাগত অনেককেই দেখা যায়। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, রড দেখা যায়।

 

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে বের হয়ে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন, কলাভবন, লেকচার থিয়েটারসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘাত।

 

ফুলার রোডে বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীদের নিজেদের হলের দিকে যেতে দেখা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্যাম্পাসে ঢুকতে নিষেধ করলে তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে অবস্থান নেয়।

 

এদিকে, ছাত্রলীগের হামলায় এখন পর্যন্ত দুইশ’রও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। অন্যদিকে রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

 

উত্তেজনা চলাকালেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী ওয়াসিফ ইনান গণমাধ্যমে বলেন, রাজাকার স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করেছে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বহিরাগতদের কর্তৃক হলে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন।

 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কারে সরকারকে দেয়া দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

 

এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রড-চাপাতি ব্যবহার করে বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এই হামলায় যে সব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অংশ নিয়েছে তাদের হলে ঢুকতে না দেওয়ারও আহ্বান জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

 

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সোমবার জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় বেশ কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ঢাকা খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদ হয়েছে বরিশাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের হামলায় কুমিল্লা রাজশাহী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পাওয়া গেছে।  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর ওপর সোমবার সন্ধ্যায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

 

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে। তাদের সেই অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি, তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা নিজেদের রাজাকার বলতে লজ্জা পায় না তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে? তারা কী শিক্ষা পেয়েছে?

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা। তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে।

 

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গতরাতে যারা নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তার জবাব ছাত্রলীগ দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাদের বলেন, এটা অবশ্যই ধৃষ্টতা। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

 

তিনি বলেন, আমরা বারবার আন্দোলনকারীদের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বাদ রেখে অন্য কোন উপায়ে বা বলপ্রয়োগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে দুর্ভোগ মেনে নেব না, রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সভা-সমাবেশ আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা লক্ষ্য করছি এ আন্দোলনের কুশীলব বিএনপি-জামায়াত তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আস্ফালনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গত রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের অনেকের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কুৎসিত স্লোগান আমরা শুনেছি। এতদিন আমরা যে আশঙ্কা করেছি তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকার বিরোধী আন্দোলনই করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ আছে। সমর্থন তারা প্রকাশ্যই করেছে। আমাদের আশঙ্কা গতকাল রাতে আরও স্পষ্ট হয়েছে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী স্লোগানে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

কোটা সংস্কার আন্দোলন: সারাদিন যা যা ঘটল

আপডেট টাইম : ১১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
ডেস্ক রিপোর্ট :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার জের ধরে সোমবার দিনভর চলা উত্তেজনা এখনও থামেনি। রাতেও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে।

 

এছাড়াও সংঘর্ষ হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকায়ও। রাতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদুল্লাহ হলের বাইরের অবস্থান নিয়েছিলেন। হলের ভেতরে কোটা আন্দোলনের সমর্থনে থাকা শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।

দুই পক্ষই প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার দিকে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম মাকসুদুর রহমান হল প্রভোস্ট ও অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরে গেলে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা।

 

কিন্তু পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেখানে যেতে দেয়নি। পরে কার্জন হলের সামনে ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

তাদের একদফা দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি বলে জানান তিনি।

 

এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সোমবার বেলা বারোটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিসহ শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সমবেত হয়।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা নার্সিং ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের ব্যানার নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়।

 

প্রায় দুই ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ দুপুর প্রায় সোয়া দুইটার দিকে ছেলেদের হলের দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেয়া ও আটকে রাখার খবর পেয়ে তারা সেখানে অগ্রসর হয়।

 

কবি জসীম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি ছেলেদের হল এখানে রয়েছে। হলগুলোর সামনে পৌঁছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

 

বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন হলগুলোর সামনে থেকে পিছিয়ে মলচত্বরে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ডাল ভেঙ্গে হাতে নেয়।

 

এখানে এসে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সোয়া তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থাকা বাকি শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসে।

 

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মল চত্বর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। তাদের সাথে বহিরাগত অনেককেই দেখা যায়। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, রড দেখা যায়।

 

এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে বের হয়ে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন, কলাভবন, লেকচার থিয়েটারসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘাত।

 

ফুলার রোডে বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীদের নিজেদের হলের দিকে যেতে দেখা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্যাম্পাসে ঢুকতে নিষেধ করলে তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে অবস্থান নেয়।

 

এদিকে, ছাত্রলীগের হামলায় এখন পর্যন্ত দুইশ’রও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। অন্যদিকে রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

 

উত্তেজনা চলাকালেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী ওয়াসিফ ইনান গণমাধ্যমে বলেন, রাজাকার স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করেছে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বহিরাগতদের কর্তৃক হলে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেন।

 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কারে সরকারকে দেয়া দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

 

এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রড-চাপাতি ব্যবহার করে বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এই হামলায় যে সব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অংশ নিয়েছে তাদের হলে ঢুকতে না দেওয়ারও আহ্বান জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

 

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সোমবার জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় বেশ কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ঢাকা খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদ হয়েছে বরিশাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের হামলায় কুমিল্লা রাজশাহী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পাওয়া গেছে।  কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর ওপর সোমবার সন্ধ্যায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

 

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে। তাদের সেই অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি, তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা নিজেদের রাজাকার বলতে লজ্জা পায় না তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে? তারা কী শিক্ষা পেয়েছে?

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা। তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে।

 

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গতরাতে যারা নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তার জবাব ছাত্রলীগ দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাদের বলেন, এটা অবশ্যই ধৃষ্টতা। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

 

তিনি বলেন, আমরা বারবার আন্দোলনকারীদের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বাদ রেখে অন্য কোন উপায়ে বা বলপ্রয়োগে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। আন্দোলনের নামে দুর্ভোগ মেনে নেব না, রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সভা-সমাবেশ আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা লক্ষ্য করছি এ আন্দোলনের কুশীলব বিএনপি-জামায়াত তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আস্ফালনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গত রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের অনেকের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কুৎসিত স্লোগান আমরা শুনেছি। এতদিন আমরা যে আশঙ্কা করেছি তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকার বিরোধী আন্দোলনই করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ আছে। সমর্থন তারা প্রকাশ্যই করেছে। আমাদের আশঙ্কা গতকাল রাতে আরও স্পষ্ট হয়েছে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী স্লোগানে।


প্রিন্ট