ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার জের ধরে সোমবার দিনভর চলা উত্তেজনা এখনও থামেনি। রাতেও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে।
এছাড়াও সংঘর্ষ হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকায়ও। রাতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদুল্লাহ হলের বাইরের অবস্থান নিয়েছিলেন। হলের ভেতরে কোটা আন্দোলনের সমর্থনে থাকা শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
দুই পক্ষই প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার দিকে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম মাকসুদুর রহমান হল প্রভোস্ট ও অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরে গেলে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা।
কিন্তু পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেখানে যেতে দেয়নি। পরে কার্জন হলের সামনে ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাদের একদফা দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি বলে জানান তিনি।
এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সোমবার বেলা বারোটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিসহ শিক্ষার্থীদের চাওয়া ছিল তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সমবেত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা নার্সিং ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের ব্যানার নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ দুপুর প্রায় সোয়া দুইটার দিকে ছেলেদের হলের দিকে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেয়া ও আটকে রাখার খবর পেয়ে তারা সেখানে অগ্রসর হয়।
কবি জসীম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি ছেলেদের হল এখানে রয়েছে। হলগুলোর সামনে পৌঁছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন হলগুলোর সামনে থেকে পিছিয়ে মলচত্বরে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাছের ডাল ভেঙ্গে হাতে নেয়।
এখানে এসে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সোয়া তিনটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থাকা বাকি শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসে।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মল চত্বর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে। তাদের সাথে বহিরাগত অনেককেই দেখা যায়। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, রড দেখা যায়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে বের হয়ে যায়। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন, কলাভবন, লেকচার থিয়েটারসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘাত।
ফুলার রোডে বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীদের নিজেদের হলের দিকে যেতে দেখা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তাদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ক্যাম্পাসে ঢুকতে নিষেধ করলে তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে অবস্থান নেয়।