চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ব্যাপক হারে জন্ম নিয়েছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম নামক ক্ষতিকর আগাছা। জেলায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৪২ হেক্টর আবাদি জমি ও ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। এই বিষাক্ত পার্থেনিয়াম নামক ক্ষতিকর আগাছা ব্যাপক হারে জন্ম নিয়েছে জেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায়, ফসলের মাঠে কিংবা আম বাগানে। দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। যার উচ্চতা এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত হয়।
এক একটি গাছ ২০ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দেয়। ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ঝাঁকরা গাছগুলোর সাদা ফুল খুবই বিষাক্ত। পার্থেনিয়াম গাছের আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার মাস। এর সাদা রঙের ফুল গোলাকার ও আঠালো হয়ে থাকে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, গুল্ম প্রজাতির এই উদ্ভিদটির ইংরেজি নাম পার্থেনিয়াম। তবে এটি অঞ্চলভেদে কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী, হোয়াইট টপ ও স্টার উড প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এই পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে এর ফুলের রেণুতে থাকা সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ পার্থেনিন মানবদেহে জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড প্রভৃতি। যা ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগ হতে পারে। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর হয়। গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়।
কৃষক বেলাল জানান, আমার আবাদি জমির পাশে পার্থেনিয়াম আগাছা অনেক আছে যে গুলোর পাশে বসে আমরা খাওয়া দাওয়া করি বিশ্রাম নিই। কিন্তু এই পার্থেনিয়াম আগাছা এতো ক্ষতিকর তা জানতাম না। তবে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে দাবি জানান এই বিষয়ে কৃষকদের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে জন সচেতনতা যেন বৃদ্ধি করে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলাম বলেন, পার্থেনিয়ামের ফুল মানুষ ও গবাদি পশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ গাছ নষ্ট করে ফসলের গুণগতমান ও উৎপাদনশীলতা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার জানান, এর পুষ্পরেণু বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে। এই আগাছা দমন করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা একান্তই জরুরি। সমস্তকিছু করতে হবে হাতে রাবারের গ্লাভস বা পলিথিন প্যাকেট জড়িয়ে ও মুখে পাতলা মাস্ক পরে নিতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এই বিষাক্ত উদ্ভিদের কাছে যাওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হামিদ জানান, পার্থেনিয়াম ফুলের রেণু বাতাসে ছড়ালে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে। যা থেকে জন্ম নিতে পারে শ্বাসকষ্ট, চর্ম, এলার্জি এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগ।
জেলায় ক্ষতিকারক পার্থেনিয়াম বিষাক্ত উদ্ভিদ সম্পর্কে জনসচেতনতায় নেই কোন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের উদ্যোগ। এই ক্ষতিকারক পার্থেনিয়াম উদ্ভিদ সম্পর্কে জনসচেতনতা এখনই জরুরি বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
প্রিন্ট