রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় রাজধানী ঢাকা থেকে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী রয়েছেন।
অন্যরা হলেন মজনু, টুটুল, আবদুর রহমান ও স্বপন। শুক্রবার রাতে ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজশাহীর বাঘা থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। পরে তাদের রাজশাহী জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর
করা হয়।
গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতা-কর্মীসহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাংবাদিক, পথচারিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে উপজেলা চত্বরের ভেতরে নতুন একটি ভবনের সামনে আশরাফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ২৬ জুন বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় বাঘা থানায় হত্যা মামলা হয়।
বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেব খান জানান, বাবুল হত্যায় পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে প্রধান আসামী করে ৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০/৩০০ বিরুদ্ধে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে বাঘা থানায় মামলা করেন। ঘটনার ৫দিন পর আক্কাছের অনুসারী আবুল কালাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে রাজশাহীর আদালতে মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশক্রমে মামলাটি এজাহার হিসেবে গন্য করা হয়েছে। বাবুল হত্যা মামলায় এর আগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে, বাঘা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।
এতে অংশ নিয়েছিলেন, পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজসহ তাদের অনুসারিরা। অপর দিকে একই দিনে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ কর্মসুচিতে অংশ নিয়েছিলেন আশরাফুল ইসলামসহ তার অনুসারিরা।
ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আ’লীগের তৃণমূল নেতা আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে অতীতেও পুলিশে বহু অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান, কর্মচারিকে মারপিট, সাংসদকে গালি-গালাজ, ধর্ষণ চেষ্টা, বিবস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায়
জড়িয়েছে তার নাম। এবার স্থানীয় আ’লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোলের আবহে সেই সব পুরনো মামলার প্রসঙ্গই উঠে আসতে শুরু করেছে। তবে রাজনৈতিক কারণে আগের দায়ের করা অধিকাংশ মামলায় তার সহপাঠীদের নামও রয়েছে অভিযোগে।
প্রিন্ট